পরির মেয়ে
মোস্তাফিজুল হক
ভরদুপুরে ফুলবাগানে
দুষ্টু কজন খেলছিলাম,
হি হি হাসির শব্দ শুনে
খুশির ডানা মেলছিলাম!
হঠাৎ দেখি সম্মুখে এক
পরির মেয়ে আইছে!
বাংলা মায়ের মধুর বোলে
দেশের-ই গান গাইছে!
অবাক চোখে বলি ওকে
এই ভাষা তুই কই পেলি?
বলল মেয়ে, এই ভাষাতে
ফোটে কত জুঁই-বেলি!
একটা সময় এ দেশেতে
নরপিশাচ জিন ছিল,
সত্যিকারের বাঙালিরা
ওদের ঠিকই চিনছিল।
ঐ জিনেদের তাড়িয়ে ওরা
বাংলা নামে দেশটা আনে,
তাঁদের কাছে সুর পেয়েছি’:
বলল মেয়ে শেষটা গানে।
একাত্তরে বাবা তাহার
রণাঙ্গনে অস্ত্র ধরে,
এমন দোষে মাকে আবার
ঐ জিনেরা ত্রস্ত করে!
বলল মেয়ে, তখন আমি
বাবার চোখে বাড়তে ছিলাম,
প্রাণত্যাগে মা জয়ী হলে
স্বর্গে এসে জন্ম নিলাম!
স্বর্গে তাহার জন্ম বলেই
তাই নাকি সে পরির মেয়ে,
দেশটাকে সে গড়তে বলে,
শ্রেষ্ঠরূপে, ফুলের চেয়ে।
শীতের রাণী
দীপক বড়ুয়া
বিকেল গড়ায় সন্ধ্যা নামে, শীতের রানি হাসে
শিশির ঝরে হাওয়ার ঠোঁটে, এই অগ্রহায়ণ মাসে
রুমঝুমঝুম নূপুর পায়ে শীত তখনই আসে
ফুল পাখি নদ হেসে হেসে, শীতকে ভালোবাসে।
নূপুরপায়ে শীতে হাঁটে শিশির ভেজা ঘাসে
পাকাধানের ডগায় দাঁড়ায়, শীতে অনায়াসে
আবার ছুটে দক্ষিনে সে, উত্তুরে যায়, ভাসে
আকাশতারা নিঝুম ঘুমে শীতের পাশেপাশে।
চাঁদের আলোয় শীতের রানির চকচকে সেই রূপ
বনবনানী গাছগাছালি দেখেই যেন চুপ
শান্তনিথর, সুগন্ধিত স্নিগ্ধকোমল ধূপ!
শীতে ভাবে, আমি আসি কার্তিকেরই পরে
প্রকৃতি ইস্ ভালোবাসে, এবং আদর করে
ঘুমবিছানায় ঘুমিয়ে রাখে, লাজুক নয়ন ভরে!
ফুলকলিরা বাগানজুড়ে শীতের ছোঁয়া পেয়ে
ফুল হয়ে যায়, গন্ধ ছড়ায়! আনন্দে গান গেয়ে
হইচইচই চেঁচিয়ে বলে, আমরা ফুলে মেয়ে!
শীত স্তব্ধ, অবাক আবার!। ফুলের কাণ্ড দেখে
শীতআদরে শুইয়ে রাখে, শিশির কণা মেখে
ফুলে ঘুমায় ফুল বাগানে, ফুলকলিদের রেখে!
শীতে দাঁড়ায় আমার গাঁয়ে, জাঁহানপুরে একা
নিঝুমরাতে দিঘীরপাড়ে শীতের সাথে দেখা
শীত বলেছে, কেউ জানে না,- আমার সীমারেখা।
স্বপ্নালোকের চাবি
বাসুদেব খাস্তগীর
সপ্ত রঙে তপ্ত আকাশ সাজলে রঙিন ফুলে
নিরবধি মনের নদী ছুটে নদীর কূলে।
মনের জমিন রঙিন হয়ে নিত্য করে খেলা
নীলাকাশে ভাসে তখন সৃষ্টি সুখের ভেলা।
ঢেউয়ের সাথে কেউবা এসে নাড়ায় দুটি হাত
করতে হিসেব খুলি আমি মনের ধারাপাত।
জীবনটাতো রঙের মেলা খেলায় ঝিলিমিল
কখনও বা আঁধার ঢাকা কখনও হয় বর্ণিল।
মনের আকাশ জুড়ে যখন স্বপ্ন ঘুরে ফিরে
রঙের ছটায় আলোক ছড়ায় অন্তপুরের নীড়ে।
স্থির থাকে না ধীর গতিতে মিলায় রঙের রেখা
বিশাল আকাশ হাহাকারে তখন ভীষণ একা।
রঙের আলোয় যখন ঢাকে মনের গহীন বন
ঠিক যেন এক আকাশ আমি তৃপ্ত সারাক্ষণ।
জীবন নামের এই নদীটির তীরে দাঁড়াই ভাবি
রঙের মাঝেই আছে যেন স্বপ্নালোকের চাবি।
পালকি টানে বেহারা
অপু বড়ুয়া
পালকি টানে বেহারা
নাদুস নুদুস চেহারা
গান গায় আর সুর তুলে বেশ
কাঁপায় পথেরমাটি
ঝমঝমিয়ে আওয়াজ তোলে
ঘুঙুর বাঁধা লাঠি।
নতুন বধু পালকিতে আজ
হুন হুনা হুন ছুটছে
যায় বেহারা অন্য গাঁয়ে
স্বপ্ন যেন লুটছে।
যদিও সেদিন নেইতো এখন
পালকি গেছে উঠে
বেহেরারা হয়তো গেছে
অন্য পেশায় ছুটে।





















































