ছড়া ও কবিতা

একটি আলোর মুখ

অপু চৌধুরী

সকাল যখন সূর্য ওঠে লালছে আলো জ্বেলে
মনেতে তাঁর উথালপাথাল একটি খেলাই খেলে!
ভাবেন না তো অন্যকিছু কর্মক্ষেত্র ছাড়া
পরিবারের সুখ যোগাতে তাঁর যে ভীষণ তাড়া!

পোশাক আশাক হোক ছেঁড়া কী আসে যায় তাতে
পাহাড় সম সুখ যদি রয় পুত-দুহিতার সাথে!
ঝরুক না সেই কাঠপোড়া রোদ-বরফ গলা শীত
বান জলও কি নাড়তে পারে এমন সুখের ভিত!

বাবার শ্রমের গতি তেমন হাজার বাধার পরও
বুক উঁচিয়ে চলতে থাকে হয় না জড়সড়
সব শ্রমেরই স্বাদ মেটে তাঁর দিনের শেষে রাতে
যখন গিয়ে ক্লান্ত শরীর মেলান সবার সাথে।

যখন বাবা দেখেন গিয়ে সবার মুখের হাসি
তাঁর মনেও বাজতে থাকে মধুর সুরের বাঁশি
সারাদিনের পরিশ্রান্তি নিমিষেই যায় ভুলে
বাবা মানেই ভালোবাসেন মনের দুয়ার খুলে।

বাবা সেই এক বিশাল ছাতা পরিবারের জন্য
যাদের সুখে হন তিনি খুব আমোদ বিভোর ধন্য
তাদের জন্যই দেন বিলিয়ে নিজের সকল সুখ
বাবা মানে নির্ভরতার একটি আলোর মুখ।

 

ফুল ফুটেছে

সাইফুদ্দিন সাকিব

উঠোন জুড়ে ফুল ফুটেছে
জবা, টগর, জুই
রিফতি মনি বল না এবার
কোনটা নিবি তুই।

টুকটুকে লাল জবাটা ওই
দুলছে বাগান মাঝে,
গোলাপ ছড়ায় মিষ্টি সুবাস
ভোরে এবং সাঁঝে।

হাসনাহেনা চামেলিরা
করছে কানাকানি,
রিফতি মনি কানটি তাদের
করছে টানাটানি।

 

 

প্রকৃতির ঘর

বাসুদেব খাস্তগীর

নদীর কাছে জল চেয়েছি গাছের কাছে ফল
উজার করে তাই দিয়েছে কেউ করেনি ছল।
জাত-পাত আর ধর্ম নিয়ে সে করে না ভাগ
মানুষ নিয়েই চিরকালই এদের অনুরাগ।

পথ কখনো চলার পথে ভাগ করে না ধর্মে
অন্তরে তার মানুষ নামই আছে মর্মে মর্মে।
ভাগ হয়নি ফুলের সুবাস নিচ্ছি অবিরত।
এক বাতাসেই বেঁচে আছি আমরা মানুষ যত।

এক মাটিরই বুকে সবাই স্বপ্নসৌধ গড়ি
রক্তেরও নেই ধর্ম কোনো রক্তে বাঁচি-মরি।
এক আকাশের ছায়ায় থেকে সবাই তো হই ধন্য
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা-হয় না ভাগে গন্য।

সাগরও তো ভাগ করেনি তার কাছে যাও তুমি
কিন্তু মানুষ বৃষ্টি জলে বানায় মরুভূমি।
এ প্রকৃতি ধর্ম নিয়ে বানায়নি তো ঘর
ধর্ম নিয়েই মানুষ তোলে বিভেদ নামের ঝড়।

 

হেমন্তের দিন

সাজ্জাদ সাদিক

মাঠ ভরা ধান হাসে সকালের রোদে
ঝলঝল ঝলকায় কারা প্রতিরোধে?
শীষগুলো ভেজা থাকে শিশিরের জলে
জলফড়িং দুপুরে ওড়ে দলে দলে।

চারপাশে ভেসে আসে ধানপাকা ঘ্রাণ
ক্ষেতে ক্ষেতে আমনের ধান অফুরান।
নতুন চালের পিঠা খেতে ভারি স্বাদ
দুটি পিঠা বেশি খেলে নেই অপরাধ।

উঠানে শিউলি ঝরে হেমন্ত ঝড়ে
তমসায় ঝিঁঝি ডাকে ঘাসে অগোচরে।
রাত হলে জেগে থাকে অর্ধেক চাঁদ
রুপালি আলোয় ঢালি সব অবসাদ।

 

দেশটা আমার

শামীমা জান্নাত শিউলী

দেশটা আমার মায়ের মতো
অনেক ভালোবাসি,
সোনার ফসল ফলায় দেখো
গ্রাম বাংলার চাষী।

দেশটা আমার রক্তে কেনা
লাখো শহিদের দান,
বাংলা আমার মাতৃভাষা
গাহি বাংলার গান।

দেশটা আমার জন্মভূমি
সবার আগে দেশ,
সবুজ শ্যামল সোনালী সে
রূপের নেইকো শেষ।

 

আজকে স্বাধীন

শিবুকান্তি দাশ

আজকে আমি স্বাধীন, জানো?
নেইকো আমার তাড়া
ইশকুল বন্ধ প্রাইভেটও নেই পড়ল মাঠে সাড়া।
ক্রিকেট খেলব নদীতে নাইব ধরব পাখির ছানা
জানো তো আমার
সবখানেতে আছে দুষ্টু হানা।
শুনবো না আজ কারো মানা
কখন ফিরবো ঘরে
তার নেই ঠিক জানা।
পিন্টু অরুপ স্বরুপ মিটু কইরে তোরা কই
মাছ ধরতে চলনা রে আজ দখিন বিলে সই
বোয়াল পুটি খলসে মাগুর
ধরব যত পারি
আয় তো তাড়াতাড়ি।
বিকেলটাতে ঘুড়ি নিয়ে খেলব পুবের বিলে
উড়বে ঘুড়ি আকাশ জুড়ে
মেঘের ভাঁজে নীলে।
সীমের মাচায় টুনটুনিদের পাতায় ঘেরা বাসা
কুষি ছানার মার অপেক্ষা দেখতে ভারি খাসা
খাস্তগীরদের পুকুর পাড়ে কলা গাছের সারি
হলুদ বরণ পাকা কলা আহ কি মিষ্টি ভারি।
সন্ধ্যার আগে ফিরব ঘরে নয়ত দমা দম
পিঠের উপর ঢাক বাজাবে মা বাবা একদম।

 

 

হেমন্তের সুর

কুলসুল বিবি

কুয়াশার চাদরে ঢেকে
নীলাম্বরের বাঁকে
ভোরের রবি উঁকি দিয়ে
হেমন্তকে ডাকে।

ঘাসের ঠোঁটে শিশির বিন্দু
ঝলমলিয়ে হাসে
নতুন ধানের ঘ্রাণে ভেসে
হেমন্তকাল আসে।

শীতল হাওয়ায় লতা পাতা
গাছের ফাঁকে দোলে
শাখে শাখে পাখপাখালি
হেমন্তের সুর তোলে।

ধানের শীষে সবুজ ঘাসে
হলদে আভা ধরে
ফসল লয়ে হেমন্ত যায়
কৃষাণ বধূর ঘরে।

 

 

নুরু এবং কালু

অপু বড়ুয়া

নুরুর বাড়ি ফটিকছড়ি
কালুর বাড়ি বাঁশখালী
স্টেশনে দুই বেকার
পিটায় বসে তাসখালি।

তাস খেলে আর পান চিবায়
দিন চলে যায় এই করে
নেই ঝামেলা সংসারের
বউ বাচ্চা নেই ঘরে।

ধার ধারে না রাজনীতিতে
করে বেড়ায় গুলবাজি
টাকা পেলেই সব মিছিলে
নয়তো মোটে নিম রাজি।

 

ইচ্ছে ডানা

শাকেরা বেগম শিমু

ইচ্ছে জাগে পাখির মতো
ডানা মেলে উড়ে,
এই ধরণী দেখবো আমি
শুধুই ঘুরে ঘুরে।

কোথায় আছে সাগর-নদী,
কোথায় মরুভূমি,
কোথায় আছে পাহাড়-গিরি
সেথায় যাবো আমি।

যাবো আমি আফ্রিকাতে
দেখবো গহীন বন,
একটু হলেও জুড়াবে
এই ছোট্ট কচিমন।

 

চাঁদের বুড়ি

যাইদ আল মারুফ

নকশা কাতান বেনারসি
হাতে রঙিন চুড়ি
ঝুমকো কানের দুল পড়েছে
লক্ষী চাঁদের বুড়ি।

ছোট্ট হাতে হেনার বাহার
আলতা রাঙা পায়ে
সোনার নোলক দুলছে নাকে
হাসছে বুড়ির মায়ে।

খোঁপায় দিল বেলির মালা
লম্বা ঘন চুলে
দাদীর বিয়ের গয়নাগাটি
গলায় আছে ঝুলে।

চাঁদের বুড়ি বউ সেজেছে
আসছে তারার মেলা
ছোট্ট খুকির ঘুম ভেঙেছে
স্বপ্নে সকাল বেলা।

 

 

হেমন্ত

এম আব্দুল হালীম বাচ্চু

বিন্দু বিন্দু ভোরের শিশির
ফুল ফসলে হাসে
ভোরে পাখির গানে গানেও
হেমন্ত সুর ভাসে।

সূর্যের আলোয় সোনালি রং
মাঠে ঝলমল করে
গাঁয়ের কৃষক স্বপ্ন দেখে
ফুটবে হাসি ঘরে!

কার্তিক মাসে মলা মাছের
হিড়িক পড়ে খালে
পাড়ার জেলে কাছা মেরে
শিকার করে জালে।

অঘ্রাণ মাসে কৃষকেরা
আমন কাটতে যায়
কৃষাণীরাও মন খুশিতে
পান সুপারি খায়।

পিঠাপুলির ধূম পড়ে যায়
আমন ধানের চালে
গুড় পাটালির দেখা মেলে
হেমন্তের এই কালে।

 

নবান্নের হেমন্ত

মোঃ দিদারুল ইসলাম

শরৎ ঋতু বিদায় নিলে
হেমন্ত দেয় উঁকি,
সকালবেলার মিষ্টি রোদে
খেলে খোকা-খুকি।

সোনারাঙা ধানের ক্ষেতে
লাগে মৃদু হাওয়া,
কৃষাণ-মজুর ফসল তোলে
ভুলে নাওয়া-খাওয়া।

বউ-ঝিয়েদের নানা কাজে
ফুরায় সারাবেলা,
খুব সকালে দাদি জমায়
পায়েস-পিঠার মেলা।

নবান্নের ওই উৎসব গাঁয়ে
সবার বাড়ি ইষ্টি,
শ্বশুর বাড়ি জামাই এলে
সঙ্গে আনে মিষ্টি।