ছড়া ও কবিতা

কেঁদে ওঠে মন

লিটন কুমার চৌধুরী

শুভ্র মেঘের ভেলা নিয়ে এই শরতে
মা আসছেন কাশ ফুলেরই চড়ে রথে,
শিউলি ফুলের গন্ধে ব্যাকুল সারাপাড়া
আনন্দে তাই বনের পাখি আত্মহারা ।

সকাল বিকাল গান করে যায় কাশের বনে
শারদীয় পুজার নানা আয়োজনে,
ধনী গরীব সবার মনে ফুটুক হাসি
নতুন জামার গন্ধে আহা খুশির রাশি ।

দু-চোখ জুড়ে আনন্দেরই খুশির মেলা
ছুটির দিনে সারাটা দিন করবে খেলা,
মহানন্দে বছর শেষে কয়েকটা দিন
মনের মাঝে সুর বেজে যায় তা ধিন্ ধিন্ ।

ফুলে ফুলে অর্ঘ্য দিয়ে পুজো হবে
মায়ের সামনে আসন পেতে বসব সবে,
দশমীরই দিনে হবে মায়ের বিসর্জন
ভাবতে তখন কষ্ট লাগে কেঁেদ ওঠে মন।

 

 

বেহায়া মশা

জসীম মেহবুব

সারাটা ঘর গান গেয়ে যাস
পুন পুনা পুনপুন,
তোদের বুঝি এসব ছাড়া
আর কোনো নেই গুণ ?

এ সংসারে তোদের বুঝি
নেই কোনো কাজ-কাম ?
আমার সাথে কেনো করিস
খামাখা গ্যাঞ্জাম ?

পড়তে বসে ঢুলছি ঘুমে
চালাস অভিযান,
প্রাণটা আমার ওষ্ঠাগত
তাই করি আনচান।

কখনো বা ঢুকিস নাকে
কখনো বা কানে,
কানটা আমার ঝালাপালা
পুন পুনাপুন গানে।

জলদি পালা রক্তচোষা
নইলে এবার মর,
এই না বলে খোকনসোনা
নিজ গালে দেয় চড়।

 

 

ঢেম কুড়কুড় ধ্বনি

কেশব জিপসী

কাশ ফুলেরা হাওয়ায় ভেসে
মেঘ হতে চায় যেন,
আমি তারই পিছুপিছু
ছুটবো নাই-বা কেন?

নীল জলেতে দুধসাদা মেঘ
হাজার ছবি আঁকে,
শাপলা ফোটা দিঘি আমায়
কাটতে সাঁতার ডাকে।

শিউলি ঘ্রাণের হাওয়া ঠেলে
ঘুম ভেঙে দেয় ভোরে,
নরম ঘাসে শিশির বিন্দু
বাঁধে মায়ার ঘোরে।

শরৎ কাব্য লেখে গোপন
শীতের আগমনী,
কোন সুদূরে বাজছে শুনি
ঢেম কুড়কুড় ধ্বনি।

 

 

ছোট্ট খোকন

নকুল শর্ম্মা

হাঁটতে গিয়ে উল্টে পড়ে ছোট্ট খোকন সোনা,
একটি দুটি বলছে কথা মাত্র হাতে গোনা।
ইচ্ছে মতো চলছে ছুটে সারা বাড়ি জুড়ে,
মা যে খোকার ক্লান্ত ভারি তারই পিছু ঘুরে।
ধরতে গেলে দেয় না ধরা আপন মনে চলে,
খাবার প্রতি নেইকো নজর পালায় খেলার ছলে।
আধো আধো মিঠে বোলে ডাকে যখন মাকে,
সাধ্যি কী আর আছে কারো শাসন করে তাকে?
চাঁদের কণা খোকন সোনা মায়ের কোলের আলো,
দুঃখ ব্যথায় মায়ের চাওয়া খোকন থাকুক ভালো।
হাঁটি হাঁটি পায়ে খোকন বেড়ায় সারা বাড়ি,
সবার সাথে ভাব যে তাহার কিছুতে নেই আড়ি।
দাঁত দেখিয়ে হাসে যখন খোকন জাদুমণি
সাতরাজার ধন মায়ের খোকন মিষ্টি চাঁদের খনি।
খেলায় মজে অবশেষে ক্লান্ত যখন ঘুমে
শান্ত হয়ে ঘুমোয় খোকন মায়ের কপোল চুমে।

 

আয় না খোকা খুকি

বিজন বেপারী

আয় না তোরা খোকাখু্কি
খাল পাড়েতে আয়
গজে চড়ে দুর্গা মা যে
বাপরে বাড়ি যায়।

কার্তিক গণেশ দুই ধারে যে
দিচ্ছে নৌকায় টান
সরস্বতী বীণা নিয়ে
গাইছে মায়ের গান।

লক্ষ্মী মা যায় ধানের ক্ষেতে
হাতে ধানের ছড়া
সিংহ মামা মাঝে মাঝে
হুংকার ছাড়ে কড়া।

অসুরগুলো লুকায় ভয়ে
কালো পচা জলে
মন্দিরেতে জয় মা দুর্গা
জয়ধ্বনি চলে।

 

 

চাষার দুখ্

যাইদ আল মারুফ

হাজার টাকা ঋণ আছে তাই
চাষার মনে দুখ্
ওঠা বসায় খোঁচা মারে
পাওনাদারের মুখ।

ক্ষেতের আলে বসে ভাবে
পাকবে কবে ধান
পাকা ধানের বস্তা দিলে
বাঁচবে চাষার মান।

হঠাৎ যদি রোগ ধরে যায়
পচবে ধানের শিষ
কোথায় যাবে বলবে যখন
পাওনা দিয়ে দিস।

ওহে পাখি কাঠবিড়ালী
একটু দয়া কর
ক্ষেতের ফসল খাসনে তোরা
ভাবিসনে আর পর।

 

 

প্রাণের সেই নদী

মাসুম মোরশেদ

নদী ক্ষয়ে যায় নদী মরে যায়
সেই নদী আর নাই
নদীতে একদা আমরা সবাই
স্নান করতাম ভাই।

জল কলকল জল ছলছল
ছোট-বড় কত ঢেউ
সেই নদী আজ হারিয়ে গিয়েছে
খবর রাখে না কেউ।

পাল তোলা নাও দক্ষিণা বাও
করছিল চলাচল
যন্ত্রের গাড়ি পার হয় আজ
নাই সে পানির তল।

এখন মানুষ হেঁটে পার হয়
বাড়িঘর একাকার
একদা এখানে জল মাছ নাও
ছিল কী ধুন্ধুমার!

রাঘব বোয়াল বিশাল বাঘাড়
ছোট ছোট কত মাছ
ঝাঁকে ঝাঁকে ছিল, পলি জল কত,
এর আনাচকানাচ।

সাদা সাদা মাছ কালো বা রঙিন
মনভরা তার স্বাদ
নাই সেই নদী সেইসব মাছ
সবটাই বরবাদ।