ছড়া ও কবিতা

চিটাগং মেল

আহসান মালেক

ভোস ভোস ধোঁয়া ছেড়ে
দিয়ে কড়া হুইসেল,
দুলে দুলে এঁকেবেঁকে
ছোটে চিটাগাং মেল ।
সিঁথি আঁকা মেঠো পথ
সারি সারি বাড়িঘর,
পিছে ফেলে ছুটে যায়
ধুলো ওড়া প্রান্তর ।

কাশবন বাঁশবন
খাল-বিল জলাশয়,
গেঁয়ো হাট খেয়াঘাট
ফেলে যায় লোকালয় ।
পথভুলো মেঘগুলো
আকাশের নীল বুকে
ডানে-বামে খেলা করে
উড়ে উড়ে কী যে সুখে ।

আড়চোখে রেলগাড়ি
থেকে থেকে দেখে সব,
হইচই কোলাহল
আখাউড়া-ভৈরব !
তারপর গিয়ে থামে
কুমিল্লা-লাকসাম,
ফেরিঅলা হেঁকে চলে,
চাই লিচু, আম-জাম ?

যেতে যেতে সুর তোলে
ঝুমঝুম গুমগুম,
হুস্ করে ব্রেক কষে
যেই আসে ফেণী-ধুম ।
যাত্রীরা ঢুলু ঢুলু
আলো জ্বলা কামরায়,
মা’র কোলে খোকা-খুকি
দুলে দুলে দোল খায় ।

এইভাবে প্রতিদিন
চিরচেনা পথ ধরে,
কত জন-মহাজন
নিয়ে ছোটে অন্তরে ।
দিনরাত ছুটে চলে
রেলগাড়ি ঝিকঝিক,
ঢাকা ছেড়ে দম নেয়
গিয়ে চিটাগাং ঠিক !

 

নিজেদের বাড়ি

এমরান চৌধুরী

ব্যাঙের ছাতার মতো চারিদিকে স্কুল
বাড়েনি তেমন করে সুবাসিত ফুল!
কাগজের ফুলে তাই সাজে ঘর-বাড়ি
প্রজন্ম চেনে না আজ নিজেদের নাড়ি।

শেকড়ের সাথে তার নেই যোগাযোগ
ফ্লাট নামে কারাগারে করে সুখ ভোগ
তার কাছে ঘাসফুল, বাঁশঝাড়া তরু
মনে হবে রূপকথা, আরবের মরু।

শহুরে জীবন মানে বাবুইর বাসা
দূর থেকে মনে হয় এ জীবন খাসা
ক্লাস কোচিং দৌড়ঝাঁপ করে কাটে দিন
কানামাছি, কুত কুত এখানে অচিন।

শহুরে কিশোর দেখে গাড়ি আর বাড়ি
শোনেনি জীবনে কেউ কাবাডি কাবাড়ি
দেখেনি চাঁদনি পসর? দেখবে কোথায়
বিশতলা ছাদে তারা কাপড় শুকায়।

ঈদ আর কোরবানে যায় ছুটে গ্রামে
অনেকের জানা নেই, গেছে কোন ধামে!
এই ধাম পর নয় রক্তের বাঁধন
দাদা-দাদি, চাচা-চাচি সব প্রিয়জন।

শহর নয় গ্রামই আমাদের বাড়ি
প্রজন্মের চেনা চাই নিজেদের নাড়ি।

 

শৈশব

সজীব মালাকার

কতো তাড়াতাড়ি যেন হারিয়েছি শৈশব
রুমা, ঝুমা, দিপা, নিপা তোরা গেলি কই সব?
কানামাছি, ষোলগুটি, ডাংগুলি খেলা যে
খেলা শেষে জলে ঝাঁপ দিয়ে যেতো বেলা যে।
ঘুড়ি নিয়ে আকাশে প্যাঁচ হতো মজাদার
বৃষ্টিতে মাখামাখি হতো জল ও কাঁদার।
শরতের দিনে সবে পালিয়ে ইশকুল
কাশবনে গিয়ে যে আনা হতো কাশফুল।
গরু গাড়ি চলতো গাঁ’র মেঠো পথ ধরে
বাউলের গান হতো কি সুমধুর স্বরে।
দল বেঁধে খুব ভোরে মোরা সবে মিলে
ভেলা নিয়ে যাওয়া হতো শাপলার বিলে।
কই গেল খোলা মাঠ, নেই ফাঁকা চারদিক,
মাঠ জুড়ে ঘর বাড়ি, সব নব আঙ্গিক।
মন কাঁদে ফিরে যেতে সেই দিনগুলিতে,
আম গাছে, জাম গাছে সারাদিন ঝুলিতে।

 

কাঠঠোকরা

সাদমান হাফিজ শুভ

ঠক-ঠক-ঠক সপাৎ-সপাৎ
মুহূর্মুহু বাজে,
ওই তো গাছে কাঠঠোকরা
ব্যস্ত আপন কাজে।

ঘাড় বাঁকিয়ে গা ঝাঁকিয়ে
ঠুকছে শিমুল গাছে,
গর্ত করে বানায় বাড়ি
ছোট্ট খুপির ছাঁচে।

ক্রিক-ক্রিক-ক্রিক তাল-বেতালে
এ ডাল ও ডাল ছোটে,
শুঁয়োপোকা একটা পেলে
অমনি লুফে ঠোঁটে।

লাল টুপি এক মাথায় যেন
হলদে গায়ের শোভা,
কাঠঠোকরা কাঠঠোকরা
কী যে মনোলোভা!

 

আমার খোকা

সৈয়দ আহম্মেদ সাদি

আমার খোকা গাইতে পারে
বাংলা ভাষায় গান,
গানের ভেতর ফুটিয়ে তোলে
লাল সবুজের প্রাণ।
আমার খোকা হৃদয় দিয়ে
ভালোবাসে দেশ।
সে হতে চায় বাঘের মতো
হতে চায় না মেষ।

বড়ো হয়ে খোকা আমার
ধরবে দেশের হাল,
দুর্নীতির সব বেড়া ভেঙে
সরাবে জঞ্জাল।
লাল সবুজের হাজার খোকা
বীর সাহসী হোক,
ওদের দ্বারাই যাক মুছে যাক
দেশের কষ্ট-শোক।