ছড়া ও কবিতা

অতুল হীরক

সুজন সাজু

কাব্য জ্ঞানের মহান ঋষি
আলোর দীপে তাড়ায় নিশি
জ্বলছে আজো দেখি,
সাম্য ন্যায়ের অতুল হীরক
হয়নি আরেক, এ কি !

বীর প্রতিভায় ঝলক মারা
নেয়’নি জনম ভুবন সারা
এমন গুণের অন্য,
বোধের প্রভায় রূপ শোভাতে
উড়ছে নিশান ধন্য।

গান কবিতায় সমুদ্রের ঢেউ
তুলেছে কেউ, পেরেছে কেউ?
পারছে শুধুই তিনি,
গর্বের সাথে মন ভরে যায়
প্রেরণার মূল চিনি।

আছেন, থাকবে যুগ যুগান্তর
নাই তো দ্বিমত নাই মনান্তর
হৃদয় রাজ্যের কবি,
সৌরভ ভরা গৌরব ঝরায়
কবির সেরা রবি।

 

 

গীতাঞ্জলির কবি

সাঈদ সাহেদুল ইসলাম

জোড়াসাঁকোর ঠাকুর ঘরে
চৌদ্দটি ভাই বোন,
তাদের মাঝে অনেক ছোট
রবির কথা শোন্।

লিখত- ছড়া, গল্প, নাটক
আঁকতো ভালো ছবি,
আস্তে ধীরে ফুটছিলো সে
আলোয় মাখা রবি।

লিখত আরও গান কবিতা
তুলতো গানে সুর,
‘বিশ্বকবি’ খেতাব পেলো
ছোট্ট সে অঙ্কুর।

সে গুরুদেব— রবি ঠাকুর
গীতাঞ্জলির কবি,
সম্মানে সে তাই পেয়েছে
নোবেল— মানে সবই।

 

চাঁদের দেখা

কাশীনাথ মজুমদার পিংকু

চাঁদ মামা রাগ করেছে
তাইতো দিনে আসে না
খুকির দিকে চেয়ে চেয়ে
মিষ্টি করে হাসে না।

উদাস মনে ভাবে খুকি
এমন যদি হতো
দিবা-রাতি সকল সময়
চাঁদের দেখা পেতো।

মা বলেছে ভাত খাওনি
আসবে না সে আর
তাইতো খুকি বসে আছে
মুখটি করে ভার।

 

দুরন্ত শৈশব

আলমগীর কবির

এখানে আমার শৈশব ছিল
কাঁটা লতা ফুল ঘাসে,
শৈশব বুঝি কোনো এক ফুল
মিঠে ঘ্রাণ ভেসে আসে!

এখানে আমার শৈশব ছিল
রংধনু রঙে মোড়া,
চাইলেই উড়ে যেতে পারতাম
পঙ্খিরাজের ঘোড়া!

এখানে আমার শৈশব ছিল
মাঠ নদী বন ঘেরা,
বাবার হাতের বানানো ঘুড়িটা
ছিল সবচেয়ে সেরা!

এখানে আমার শৈশব ছিল
মায়ার বাঁধনে বাঁধা,
খেলতে খেলতে গায় লেগে যেতো
কত ধুলো বালি কাদা!

এখানে আমার শৈশব ছিল
সুপুরি পাতার বাঁশি,
রূপকথা রাত মায়াবী জোনাক
দাদীমার মুখে হাসি।

এখানে আমার শৈশব ছিল
মায়ের আদরে মাখা,
কোনখানে যেন হারিয়ে ফেলেছি
প্রজাপতি রঙ পাখা।

 

 

রাত জাগাদের দলে

কুলসুম বিবি

ঝিলমিল ঝিলমিল জ্বলে ওই গগনে তারা
রূপালী চাঁদ বললো হেসে সে যে সঙ্গী ছাড়া।
একলা একা যাই বেরিয়ে ঘুমায় যখন পাড়া
চাঁদের সাথে বেঁধে জুঁটি রাত্রি জাগি সারা।

মেঠোপথে হেঁটে হেঁটে মাটির পরশ পেয়ে
বিবাগী মন নেচে ওঠে অচিন সুরে গেয়ে।
জোসনা রাতে গাঁয়ের পথে মন যে বাঁধনহারা
সুরে সুরে ডেকে বলি জেগে কারা কারা।
জোনাকির দল উড়ে এসে সাথী হয়ে বলে
ঝিরি হাওয়া ফুলের সুবাস রাত জাগাদের দলে।
হাত বাড়িয়ে গাছের পাতা চুলের বেনি ধরে
মুচকি হেসে বলে বন্ধু এসো পাতার ঘরে।

পথের ধারে কাটারিগাছ আঁকড়ে ধরে চরণ
আলতো ছোঁয়ায় লজ্জাবতীর লাজে লজ্জা বরণ।
একটু দূরে হেঁটে গিয়ে দাঁড়াই পথের বাঁকে
হাসনাহেনা জুঁই চামেলি প্রিয় নামে ডাকে।

 

 

ওই তো আমার খোকন

মজনু মিয়া

একটি মায়ের ভীষণ কান্না
করছে শুধু ছটফট,
কোথায় আমার খোকন সোনা
বের করে দাও চটপট।

অনেক খোঁজাখুঁজির পরে
একটু চিহ্ন মিলে,
ওই তো আমার খোকন সোনা
আগুন লাগছে দিলে।

জ্ঞান হারিয়ে মা জননীর
জীবন বুঝি যায়,
হায় রে আমার বুকের মানিক
আয় রে বুকে আয়।

 

বাঁচা দায়

মাসুম মোরশেদ

বাড়ছে গাড়ি রকমারি
উড়ছে ধুলো বাড়ছে রোগ,
মরছে মানুষ রাস্তাঘাটে
বাড়ছে অনাহূত শোক।

সাদা ধোঁয়া কালো ধোঁয়া
ছেয়ে গেছে শহরময়,
শ্বাসকষ্ট আর হাঁপানিতে
কতজনের জীবনক্ষয়।

কানের ভেতর ভোঁ ভোঁ করে
ভে-পুঁ , পে-পুঁ চলছে,
ধরার যারা বলার যারা
ধরছে কি-বা বলছে?

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি
বাড়ছে রাস্তা তত কি?
যার চলে যায় তারা বোঝে
দগদগে সেই ক্ষত কী।

আইন-কানুন সবই জানি
না মেনেও যায় যে চলা,
ভয়-শঙ্কার নাই যে কিছু
প্রয়োগ ঠিক ছলাকলা।

 

 

আমার দেশের

মোঃ দিদারুল ইসলাম

আমার দেশের খাল-নদী-বিল
বর্ষায় জলে ভরে,
জেলে ভাইদের খুশির জোয়ার
কই-পুঁটিমাছ ধরে।
আমার দেশের পাহাড়-টিলায়
জুম চাষিদের বাড়ি,
রোদ-বৃষ্টিতে গামছা মাথায়
ফসল ফলায় কাড়ি।

আমার দেশের গাঁয়ের মানুষ
ভুত-জ্বিন নাহি ডরে,
বিপদ দেখলে হাতটি বাড়ায়
এক যে সবার তরে।

আমার দেশের সুখের বিনাশ
করবেই যার নেশা,
কুলাঙ্গার সে, জাতির শত্রু
ধান্দাই তার পেশা।

 

বেঁটে চান

মোস্তাফিজুল হক

কাদেরের দাদা চান
অতিশয় গাধা চান- স্বভাবটা রুক্ষ।
চুন দিয়ে খেয়ে পান
গলা ছেড়ে ধরে গান কমায় সে দুঃখ।

রবি দেখে রাত্রে সে
হেঁটে চলে হাতড়ে সে- নয় মোটে অন্ধ।
হাতড়াতে মজা পায়
বাসিপচা গজা খায়- হোক যত গন্ধ!

রং ছাড়া এঁকে ছবি
চাঁদ দেখে ভাবে রবি- ভাবনাতে মত্ত।
আম ভাবে আমড়াকে
ফাল্গুনে তাল পাকে- বলে দাদা সত্য!

গজারির খোঁটা চান
বেঁটে লোক মোটা চান অতিশয় মন্দ।
গরু বাঁধা খাম্বা সে
ডেকে ওঠে হাম্বা সে- বাঁধায় সে দ্বন্দ্ব।

ঝোলা নিয়ে হেঁটে চলে
ভিক্ষায় ভরে থলে ধরে সুর ও ছন্দ।
শির যেন তিনতলা
সে কী তার উঁচু গলা- নেই কোনো সন্দ!

ঘিয়ে খায় পান্তা সে
যেন সবজান্তা সে- মুখে রাখে খইনি!
দেখিয়ে সে চারধার
বলে বাবা জমিদার, এতদিন কইনি।

একদিন হলো সে কী
বড়াইটা হলো মেকী- লিখে ভুল পদ্য।
লোকে ধরে টুটি তার
উপড়ায় খুঁটি তার- হলো বোকা সদ্য।

মনে তার নেই জোশ
করে শুধু আফসোস, করে রাতে নিত্য।
রাগে করে ফোঁসফোঁস
কেন লোকে ধরে দোষ? ভালো নেই চিত্ত!

পদ পেতে আলবৎ
ভাবে হাটে দেবে খৎ- চাটবে সে সাদরে।
থলেভরা জমা চাই-
বলবে সে ক্ষমা চাই, দাদাদের পা ধরে।