ছড়া ও কবিতা

মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে

সাহসী মাতা মাহেরীন

শচীন্দ্র নাথ গাইন

মহীয়সী নারী জ্বলজ্বলে তারা শিক্ষিকা মাহেরীন
কারোরই সাধ্য নেই তো তোমার শোধ করে দেবে ঋণ।
দাউ দাউ করা আগুন দেখেও সাহসে করেছ ভর
ছাত্র-ছাত্রী সন্তান সম, কাউকে ভাবোনি পর।

আগুনের সাথে লড়ছে শিশুরা, অসহায়-নিষ্পাপ
ওদের বাঁচাতে মৃত্যুর মুখে তুমিও দিয়েছ ঝাঁপ।
আগলে ওদের বুকের মাঝারে টেনে টেনে করো বার
তোমার জীবন সঙ্কটময় তথাপি মানোনি হার।

আগুনের লেলিহান শিখাটার ভয়াবহ ছিল রূপ
মাতৃস্নেহে তুমি যে অটল থাকতে পারোনি চুপ।
তরতাজা ফুল যখনই হচ্ছে জ্বলেপুড়ে সব খাক
তোমার হৃদয় বিগলিত হলো শুনে চিৎকার, ডাক।

তোমার জন্যে আজও টিকে আছে অনেকগুলো জান
ওদের বাঁচিয়ে অকাতরে নিজে করেছ জীবন দান।
মানবিকতায় অনন্য তুমি মমতায় ভরা বুক
তোমার নামেতে সকলেই আঁকে সাহসী মাতার মুখ।

 

আগুনে পোড়া কুঁড়িগুলো

স্বপন শর্মা

ফুল-বাগানের কুঁড়িগুলো অসময়ে ঝরে
শোকের মাতম শুরু হলো ভোমর অলির ঘরে।
তাদের মাঝের কষ্টগুলো, শহর হতে গাঁয়ে
ছড়িয়ে পড়ে ঝড়ের বেগে ডানে কিংবা বাঁয়ে।

কুঁড়িগুলো ফুল হতো সব পাঁপড়ি খুলতো তারা
পাঁপড়ি খোলার আগেই জীবন হয় যে দিশেহারা।
ফুল হলো না ফুলকাননে কার যে ভুলের মাশুল!
সেই ভুলের কি এই খেসারত? প্রাণ দিয়ে হয় উসুল।

আগুন পাখি ফুল বাগানে হুল ফোটালো এসে
কুঁড়ি সকল, অগ্নি-দগ্ধ, হয় যে এক নিমিশে।
ফুলের সুবাস নেই এখন আর, দগ্ধ-পচা ঘ্রাণে
আকাশজুড়ে পুরনো শকুন, উড়ছে তবু প্রাণে!

হুশ হবে কি, কর্তৃপক্ষের? ধরবে তারা শিকার!
কে দিলো যে আকাশজুড়ে, ওড়াবার অধিকার?
থাকতে সময় নির্মূল করো, ডানা ওঠার আগে
নয় তো হিসেব কষতে হবে বিশাল বড় দাগে।

 

কাঁদে প্রাণ!

শ্যামল বণিক অঞ্জন

থেমে গেছে কাকলি কোলাহল গান
ঝলসানো পাখিগুলো আজ নিঃস্প্রাণ!
বিষাদে কালো মেঘে ঢাকা চারপাশ
থরে থরে আছে পড়ে কঁচি কঁচি লাশ!
বেদনায় কাঁদে প্রাণ ভাঙে নদী কুল
কলিগুলো ঝরে গেছে হলো না তো ফুল!

 

 

দত্যি বিমান

আ.ফ.ম. মোদাচ্ছের আলী

আকাশ পানে দু চোখ মেলে
দেখতো বিমান সামি
বৈমানিকের গগন ছোঁয়ার
স্বপ্ন দিবস যামি।
হঠাৎ দুপুর দস্যি বিমান
মাইলস্টোনের মাঝ
নিভে গেল রঙিন স্বপন
আনলো দুখের সাঁঝ।
সামিউলের আকাশ ছোঁয়া
মেঘের পালক আলোর ধোঁয়া
আর হলো না ধরা,
দস্যি বিমান জ্বালিয়ে দিলো
মায়ের সামি কেড়ে নিলো
কাঁদছে বসুন্ধরা।

 

সব শেষ

শাহীন খান

সব শেষ
কাঁদে দেশ।

পুড়ে ছাই
কিছু নাই!

চোখে জল
টলমল!

বাবা সোনা
জ্বালোবো না।

মা ডাকে
ছবি আঁকে

বাধা ছিঁড়ে
আয় নীড়ে।

 

 

মাইলস্টোন স্কুল ট্রাজেডি

নার্গিস আক্তার

বুলবুলিরা স্কুল থেকে
ফিরবে না আর কোনদিন
ছুটির ঘন্টা বেজে উঠলো
মরণপণে বাজলো বীণ।

স্কুল ছাদে পড়লো বিমান
ধরল আগুন গেল প্রাণ
চিৎকার করে বাঁচাও বাঁচাও
আগুন নিল অনেক জান।

খবর পেয়ে ছুটে এলো
বাবা-মায়ের নেই তো হুশ
এদিক ওদিক খুঁজে বেড়ায়
অশ্রু জলে হয় বেহুশ।

সন্তান হারা মা বাপের শোক
কালবৈশাখী ঝড়ের রূপ
মায়ে কাঁদে বাবায় কাঁদে
মুখগুলা সব নিশ্চুপ।

 

স্বর্গের পথে

আব্দুস সাত্তার সুমন

বন্ধু আমার সঙ্গী-সাথী
আর হবে না দেখা?
ছোট্ট ছিলাম পাঠশালাতে
হয়নি পড়ালেখা!

যাচ্ছি আমি স্বর্গের পথে
আত্মাগুলোর সাথে,
দূর আকাশের তারা হয়ে।
জ্বলবো আমি রাতে।

হাত বাড়ালে বন্ধু হয়ে
টেনে তুললে যখন!
মাংসপেশি ঝলসে গিয়ে
খুলে রইলো তখন।

প্রশ্ন আমি রেখে গেলাম
উত্তর আমি চাই
কাদের জন্য জীবন দিলাম
দেহ পুড়ে ছাই?

নিষ্পাপ আমার ছোট্ট জীবন
বিচার করো প্রভু,
দেশের মানুষ ক্ষমা করলেও
তুমি করো না কভু!

 

মাইলস্টোনের ফুল

জিৎ মন্ডল

কত ফুল ঝরে গেলো
গন্ধ বিলাবার আগে,
কত ফুল দগ্ধ হলো
সাজানো ফুলের বাগে।

কত ফুল দিগি¦দিক
ছুটছে গ্রহের মতো,
কত ফুল নিরব অশ্রু
ফেলছে অবিরত।

কত ফুলের আত্মচিৎকার
ভাসে রাজপথে,
কত ফুল বাঁচার জন্য
লড়ছে জমের সাথে।