ছড়া ও কবিতা

আষাঢ়ের খেলা

আসাদুজ্জামান খান মুকুল

আষাঢ়ে মেঘ নেমে এসেই
ভিজিয়েছে বাগ,
পাখি ডাকছে কিচিরমিচির
তুলে গানের রাগ।

পথের ধারে কাদায় নেমে
খেলছে ব্যাঙের দল,
খুকু এসে হাত বাড়িয়ে
ছুঁয়ে যাচ্ছে জল।

নদী-বিল-ঝিল ভরছে জলে
ঢেউ ছুঁয়েছে চর।
খুকু ভাসায় কাগজের নাও
দুলছে জলের পর।

আষাঢ় পেয়ে টেংরা-পুঁটি
তুলছে দারুণ নাচ,
আয় রে সবে এই খেলাটা
দেখি গিয়ে কাছ!

 

 

কদম ফুলের হাসি

হানিফ রাজা

বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর
রিমিঝিমি ছন্দে,
চাষি ভায়া মাঠে ছোটে
সোঁদামাটির গন্ধে।

ভরা বর্ষায় গাছের শাখায়
কদম-কেয়া ফোটে,
মেঘের তানে ফুলখুকিরা
রঙিন বনে ছোটে।

আদর মাখা বৃষ্টির ছন্দে
ভাসে কদম হাসি,
ঝড়ের হাওয়ায় মন দোলে যে
ছুঁয়ে সুরের রাশি।

নতুন পানি পেয়ে ব্যাঙে
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর করে,
ছেলেমেয়ে ডোবা-নালায়
কলার ভেলায় চড়ে।

বৃষ্টির ছোঁয়ায় সবুজ ধরা
কী! অপরূপ লাগে,
বৃষ্টি এলে যুগল মনে
ভালোবাসা জাগে।

 

 

কোলাব্যাঙের বিয়ে

সারমিন চৌধুরী

বৃষ্টি জলে আনন্দ মনে
নাইছে কোলাব্যাঙ,
খালে-বিলে ঘুরে বেড়ায়
ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।

ভাবে মনে ঢোল বাজিয়ে
করবে এবার বিয়ে,
বউ আনতে যাবে মাথায়
কচু পাতা দিয়ে।

সঙ্গে যাবে শিং, মাগুর
কাজী খলসে মাছ,
বসবে সবাই সারি বেঁধে
ধরে কলাগাছ।

বউ সেজে থাকবে বসে
বৃষ্টি জলের পুঁটি,
বাঁধবে দুজন মিলেমিশে
বর্ষাদিনে জুটি।

 

 

বৃষ্টি এলো নেমে

সাইফুল্লাহ কায়সার

মেঘের পাহাড় বেয়ে বেয়ে
বৃষ্টি এলো নেমে
বৃষ্টি যেন আঁকছে ছবি
দুটি চোখের ফ্রেমে।

উথাল নদী উথাল বন
উথাল এই মন
বৃষ্টি মেয়ে রূপ ছড়িয়ে
দেয় এঁকে স্বপন।

মিষ্টি মধুর হাওয়ার গানে
বাজে মধুর সুরে,
বৃষ্টি তালে সুখের পালে
যাই হারিয়ে দূরে।

বৃষ্টি এলে এই প্রকৃতির
প্রাণের জোয়ার আসে
ভালোবাসার রঙিন ডানায়
গাছগাছালি হাসে।

 

 

আনন্দ তুই

আখতারুল ইসলাম

আনন্দ তুই কোথায় থাকিস ? কোন সে দুরের গাঁয়ে
ঢেউ থির থির বাড়ির পাশে জংলা নদীর নায়ে।
ইচ্ছে হলে বেড়াস ঘুরে হাওয়ায় ভেসে ভেসে
মেঘের ডানায় পাখির ডানায় অচিন কোনো দেশে।

কিংবা থাকিস দূর পাহাড়ের গহীন কোনো বনে
মেঘের সাথে কথা বলিস, বলিস সঙ্গোপনে।
কখনো তুই বুকের ভেতর চপল প্রজাপতি
ছুটতে থাকা ঘাসফড়িংয়ের উড়ে চলার গতি।
আবার দেখি নীল আকাশে রঙধনুটার সাঁকো
চুপটি করে দুই পাহাড়ে রঙিন দু পা রাখো।

আনন্দ তুই মায়ের আঁচল, মুখ লুকিয়ে থাকা
বোনের স্নেহে ভাইয়ের আদর স্বপ্ন চোখে আঁকা।
পুকুর-দিঘি দাপিয়ে বেড়াস ইচ্ছেমতো নেচে
মাছে মাছে রাখিস ভরে নদীর পানি সেঁচে।
আনন্দ তুই বাবার দুহাত, নির্ভরতার ছায়া
আমার প্রিয় গ্রামের ছবি সবুজ শ্যামল মায়া।
তুই নাকি ঠিক বন্ধু আমার। যায় না কেনো চেনা?
তোকে পেলে ফুটতে থাকে গোলাপ হাসনাহেনা।

তুই নাকি ভাই দুষ্টু ভীষণ? আমায় একা পেলে
সময় কাটে দখিন বিলে কতই হেসে খেলে।
তোকে নিয়ে ছুটতে থাকি বিকেল বেলা মাঠে
কিংবা থাকি ঢেউ ভাঙা ওই কর্ণফুলির ঘাটে।

মা বলে যে, আনন্দ তুই একটু ছন্নছাড়া
তোর সাথে ঠিক ভাব জমালে আমি বাঁধনহারা।
তুই নাকি ভাই টিভি কার্টুন, নাটক ছায়াছবি
ইচ্ছে হলে আঁকতে পাড়ি, হতে পাড়ি কবি।

আনন্দ তুই পড়ার ঘরে আসতি যদি একা
হঠাৎ করে পেতাম আমি কল্পলোকের দেখা।
ক্লাসে আমি প্রথম হতাম, হতাম আমি সেরা
জগৎ হতো অন্য রকম, ডাকে যে স্বপ্নেরা।
এক নিমিষে হতাম আমি পরির দেশের রাজা
দুষ্টু বলে কেউ দিতো না আমায় কভু সাজা।
রোদের ভাঁজে হাওয়ার সাথে একলা ঘুরে ঘুরে
তোকে নিয়ে হারিয়ে যেতাম অনেক অনেক দুরে।

মনের মাঝে সুখ সারথি বাজে অজান্তে
বন্ধুরা ঠিক ডাকছে আমায় মাঠের ও প্রান্তে।
আনন্দ তুই খেলার সাথি মেলার সাথি ভাই
তোকে পেলে খুশির জোয়ার তাইরে নাইরে নাই।

 

 

শ্রীরাম জলদাস

সনজিত দে

আমায় তোমরা চিনতে পারো বলতে পারো নামটা?
এই গ্রামে রোজ এলে আমার যায় জুড়িয়ে প্রাণটা।
এ গ্রামেরই একটি পাশে যায় বয়ে এক নদী
নদী ছিল শান্ত সে খুব ছুটতো নিরবধি।
ছোট্ট নদী পাড়ি দিতাম সেই সোনালি দিন
এপার-ওপার ছিল শুধু উত্তর আর দক্ষিণ।
শান্ত নদী অশান্ত হয় হঠাৎ ওঠে রুখে

সে আমাদের গ্রাম গিলে খায় আস্ত নদীর বুকে।

আমরা হলাম ছন্নছাড়া প্রবল জলচ্ছ্বাসে
বসত ভিটে নদীর পেটে ব্যঙ্গ করে হাসে।
ঘর হারালাম দোর হারালাম নেই কিছু আর বাকি
ভাসতে ভাসতে পেছন ফিরে উদাস চেয়ে থাকি।

বাড়ির নিশান পাই না খুঁজে দীর্ঘশ্বাস ফেলে
আমরা গেলাম অন্য কোথাও মায়ার বাঁধন ঠেলে।
আজকে এলাম অন্য পারে বছর তিনেক পরে
ইচ্ছে কেবল জাগছে শুধু আমার এ অন্তরে।

ওই দেখা যায় চর জেগেছে চিনতে কি আর পারি?
চর দখলের মহোৎসবে চলছে মারামারি।
নদীরে তোর জলে কতো জলের সাথে খেলে
বংশগত তোর জলেতে আমরা ছিলাম জেলে।

আজকে আমার নেই কিছু আর ফেলি দীর্ঘশ্বাস
আমি হলাম এ গাঁয়েরই শ্রীরাম জলদাস ।

 

 

মিষ্টি কুটুম ডাকছে

সুজন সাজু

ভোরের পাখি ডাকছে আমায়
খেলতে পাখির সাথে
কুসুমকলি মাতে,
হাওয়ায় নায়ে পাপড়ি দোলায়
উৎসুকে সাথ-সাথে।
কল্কি ফুলের শাখায় দোয়েল
নাচছে সুরের বীণে
সকাল শুরুর দিনে,
প্রাণ স্বজনী উচ্ছ্বাসে আজ
ফুল্ল ধিন তাক ধিনে।

শালিক পাখি উঠোন কোণে
করছে চেঁচামেচি
কাছে যখন গেছি,
বললো শালিক মন থেকে সব
দূর করে দাও প্যাঁচ-ই।

শান্ত ভোরের কোমল ছোঁয়ায়
প্রীতির কলস ঢালে
নিত্য প্রভাত কালে,
মিষ্টি কুটুম ডাকছে আয় আয়
সুর মূর্ছনার তালে।