জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী আজ।
কবির প্রতি আমাদের অতল শ্রদ্ধা
এক নজরুল যে
এমরান চৌধুরী
চুরুলিয়ার দুখুুমিয়া বাঁবরি মাথার চুল
কাব্য লিখে জ্বালায় আগুন
বাধায় হুলস্থূল।
শোষকেরা উঠল কেঁপে
ভরল জেলে তাঁকে
সাধ্য কার অগ্নিবীণার
তারটা বেঁধে রাখে?
বিষের বাঁশির বিষের সুরে
আমজনতার কণ্ঠে উঠে
শেকল ভাঙার গান
শেকল ভাঙার গানে
ভাঙলো আগল কারা,
সত্য-ন্যায়ের উঠল তুমুল ঝড়
ঝড়ের তোড়ে উঠল কেঁপে
অটবী থর থর।
শোষক যত বুক ফুলিয়ে
চলত এতদিন
বুঝল তারা থাকবে না আর
তাদের কোনো চিন।
ভাঙতে শেকল জাগল মানুষ
পড়ল বিষম সাড়া
কাব্য দিয়ে ফেউ তাড়ানো
দেখিয়ে দিলো কে?
এক নজরুল যে।
পড়ার ঘরে নজরুল
সুব্রত চৌধুরী
সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে হাই ওঠে যে খুব
হঠাৎ করে কাঁধে আমার কেউ যে রাখে হাত
এক পলকে দেই যে আমি স্বপ্ন-ঘুমে ডুব
ঘাড় ফিরিয়ে দেখি দুখু স্বপ্নে বাজিমাত !
কানে কানে শুধোন আমায়, তুমি বড়ো বোকা
শিখতে হলে যেতে হবে তেপান্তরের মাঠে
বইয়ের পড়া পড়ে কি কেউ বড়ো হয় রে খোকা?
খোলা হাওয়ায় শিক্ষা নেবে জীবনবোধের পাঠে।
দুখুর কথা শুনে আমি খালি পায়ে ছুটে
ফড়িং ওড়ে ছন্দে সুরে সবুজ দুর্বা ঘাসে
নদীর পাড়ে অস্তাচলে সূর্য্যি মামা লুটে
ঢেউয়ের দোলে ছন্দ তালে পালের নৌকা ভাসে।
সন্ধ্যাকাশে চাঁদ যে হাসে মিটিমিটি তারা
জুনি পোকা নিভে জ্বলে ছড়ায় জোনাক আলো
রূপোর সিকি ঝিকিমিকি খুশি-আত্মহারা
সন্ধ্যারতি আজান সুরে ঘোচে মনের কালো।
ঘুমের ঘোরে কাটলে পড়ে নয়ন মেলে দেখি
পড়ার ঘরে দেয়াল জুড়ে দুখুর ছবি একি!
মানবপ্রেমী নজরুল
শচীন্দ্র নাথ গাইন
মাথা ভরা ঝাঁকড়ানো চুল
বুদ্ধিদীপ্ত চোখ,
ভীষণ ভালো বাসতো তাকে
খেটে-খাওয়া লোক।
কষ্ট গাঙে সাঁতরানো তার
জন্ম থেকেই শুরু,
অভাব নিয়ে চললেও বুক
হয়নি ভয়ে দুরু।
মক্তবের পাঠ শেষ না হতেই
চাকরি চলে খোঁজা,
বাপহারা হন অকালে তাই
চাপলো ঘাড়ে বোঝা।
নানারকম চাকরি পান,আর
দিতে থাকেন ছেড়ে,
তার ভেতরে কবিত্বভাব
উঠতে থাকে বেড়ে।
দ্রোহের ভাষায় কাব্য লিখে
পেলেন অধিক খ্যাতি,
মানবপ্রেমী কবি নজরুল
মানুষ স্বজন-জ্ঞাতি।
সকাল বেলার পাখি
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
সকাল বেলার পাখিটি রোজ
ডাকে কুসুম বাগে,
ফুল বাগানে ফুটেছে ফুল
আলোর অনুরাগে।
দোর খুলে দেয় খুকুমণির
ঘুম থেকে ঠিক তুলে,
জুঁই শাখে ওই পাখি নাচে
হাওয়ায় দুলে দুলে।
পুব আকাশে সূর্য হাসে
লালচে কী টুকটুকে,
হাল খুলে পাল তুলে তরী
ছোটে নদীর বুকে।
গানের পাখির ঠোঁটে সুরের
নেইরে কোনো তুল,
সেই পাখিটি ঝাঁকড়া চুলের
কাজী নজরুল।
নজরুল
নকুল শর্ম্মা
নজরুল তুমি সাম্যের এক নাম
তুমি বিদ্রোহী কবি,
বাংলার বুকে আঁকি চির সুখে
কবিতায় তোমার ছবি।
অগ্নিবীণা বাজাও তুমি
সাম্যের সুর তুলে,
তোমার গানে তোমার কাব্যে
বিভেদ সবাই ভুলে।
বঙ্গ ছাড়ি তোমার ব্যাপ্তি
সাতসমুদ্রের পারে,
তোমার লেখা পৌঁছে গেছে
বিশ্বের দ্বারে দ্বারে।
হয়নি নত নজরুল
সাঈদ সাহেদুল ইসলাম
দুরন্ত বেশ— চলাফেরায়
উড়ন্ত তার গতি,
যারই ভয়ে থাকত ভীত
শোষক সমাজপতি।
জেল-জুলুমে হয়নি নত
উঁচু মাথা তার,
জেলেই বসে দ্রোহ করে
কলম হাতিয়ার।
নিঃস্ব- দুখী- মানবতার
ফুল ফোটাতে বুকে,
একাই যেন হেঁকে ওঠে
সকল বাধা রুখে।
কাব্য-ছড়া-নাটক-গানে
সে কাজী নজরুল,
তার লেখনি ধারাতে সে
নদীর সমতুল।