পরিয়ে দিলাম স্বর্ণকাজল
সুবর্ণা দাশ মুনমুন
ঘুমের ঘোরে দেখি সেদিন কর্ণফুলীর তীর
দাঁড়িয়ে আছে মতিয়ুর আর তোরই তিতুমীর।
বললো জানো, আল মাহমুদ শঙ্খচিলের বেশে
খুঁজতে গেছে মায়ের নোলক মাকে ভালোবেসে।
মা আছে তার অপেক্ষাতে, খুঁজছে শুধু তাকে
তিতাস নদীর ঢেউয়ের আঁড়ে, কর্ণফুলীর বাঁকে।
কর্ণফুলীর নৌকোর তলায় রুপোর পাটাতন
পা দুলিয়ে গান ধরেছে একলাটি লালন।
গাইছে সুখে, জাত কারে কয়, কেমন বা তার রূপ
মুসলমানের দুঃখে পোড়ে হেঁদুর বুকে ধূপ।
গানের সুরে যাচ্ছি দূরে ঢেউয়ের পরে ঢেউ
পাল তোলা এক নৌকোয় যেন দাঁড়িয়ে আছেন কেউ।
সোনার শব্দে লিখছে রবি,আমরা কাঁদি হাসি
ওমা আমার বাংলা মাগো তোকেই ভালোবাসি।
মনে আছে, তোর ছেলে মা সেই যে সূর্যসেন
একটা সূর্য কিনতে গিয়ে আকাশটা কিনলেন।
তোর জন্যে বর্ণমালা আনতে গিয়ে কারা
বায়ান্নতেই ভাঙলো একশো চুয়াল্লিশের ধারা ?
আমার যে মা কিচ্ছুটি নেই,কী দেব বল তোকে ?
স্বর্ণকাজল দিলাম না হয় শ্যামলা মায়ের চোখে।
ঘুম ভাঙার গান
আসাদুজ্জামান খান মুকুল
কুক্কুরু কুক ডাকছে মোরগ
হচ্ছে নতুন ভোর,
খুকুমণি ঘুমটি ছেড়ে
খোল ঘরের দোর।
জেগে দেখো পাখির গানে
মাতাল করছে সব,
ফুল ফুটেছে কুসুমবাগে
ভ্রমর তুলছে রব।
রবি মামা দিচ্ছে হামা
পুব আকাশে ওই,
পাতিহাঁসে পুকুর জলে
করছে রে থই থই।
গৃহিণীরা গৃহের কাজে
ডোবায় মন-প্রাণ,
চাষী ভায়া ছুটছে মাঠে
গেয়ে ভোরের গান।
নতুন ভোরের আবেশে যে
কেউ নেই ঘুমে আর,
খুকুমণি প্রাতেঃ উঠে
হও না ঘরের বার !
মা পাখি
আব্দুস সাত্তার সুমন
সারাদিন খুঁজে খুঁজে
নিয়ে আসে দানা,
মা পাখি সবার মুখে
তুলে দেয় খানা।
মা পাখি ডানা দিয়ে
আগলে রাখে ঘর,
সবাই ছেড়ে চলে যায়
মা হয় না পর।
বিপদ আসলে মা পাখির
ছত্র-ছায়ার নিচে,
বুক পেতে দেয় সবার আগে
থাকে ছানার পিছে।
মা পাখি সবার সেরা
ভালোবাসেন যিনি,
নিঃস্বার্থে ধরে রাখে
স্বার্থ ছাড়া তিনি।
ঝড় এলে
মজনু মিয়া
খোকাখুকু চুপিচুপি
যায় আম গাছের তলে,
চুপটি করে দাঁড়ায় থাকে
আম কুড়ানোর ছলে।
যেই উঠে ঝড় তুফান বেগে
টপাটপ আম পড়ে,
তাড়াতাড়ি দু’হাত দিয়ে
কুড়িয়ে কুচ ভরে।
মা যেন না দেখতে পারে
খেয়াল ঠিকই রাখে,
কারণ, মায়ে বকবে ভীষণ
দেখে যদি থাকে।
মায়ের ছবি
সারমিন চৌধুরী
উঠোন কোণে বসে খুকি
আঁকে মায়ের ছবি,
মায়ের মুখে ঝিলিক দিয়ে
হাসে পুবের রবি।
মাঝেমধ্যেই মেঘরা এসে
মাকে দিচ্ছে ছায়া,
হরেক রঙে আঁকছে খুকি
ছবির মধ্যে মায়া।
বাতাস এসে খেলা করে
মায়ের আঁচল নিয়ে,
ভাবছে খুকি আঁকবে সেটা
কোন রঙটা দিয়ে।
আঁকা শেষে মায়ের ছবি
দেখায় খুকি মাকে,
খুশি হয়ে কপালে দেয়
মায়ে চুমো এঁকে।
আম কুড়াতে যাব
লিটন কুমার চৌধুরী
আমের ঘ্রাণে পাগল করে
মাথায় ঝড়ের বাজ,
আম কুড়াতে যাবোই যাব
বলছি আমি আজ।
কাল বৈশাখীর কালো থাবা
ভাঙে গাছের ডাল,
তাণ্ডব তার হিংসুটে খুব
ঝড় যে কী উত্তাল।
চোখে এখন দেখছি কেবল
ভয় পেলে কি চলে,
আম কুড়াতে ছুটে গেলাম
সঙ্গে নিলাম থলে।
হঠাৎ দেখি ঝড় থেমে যায়
দুপুর গড়ায় ঘড়ির কাটায়।
রৌদ্র পেয়ে পাখির ছানা
দেয় এগিযে ডানা,
আহা! কত কষ্ট করে
যায় ভেঙে ঠিকানা।
আমরা মানুষ আরামপ্রিয়
কত্তো আদর পাই,
ঝড়ে ভাঙে পাখির বাসা
কাঁদে বাচ্চারাই।