বোশেখের কোলে মায়া
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
চৈত্রের রাত শেষে বোশেখের পালা
খুলে যায় শুভ নব ভোরেরই ডালা।
মায়া প্রীতি মাখা হাসি খুশি কথা বলা
বোশেখের আলো পথে শুরু হলো চলা।
বোশেখের শাখে শাখে হাসে কচি পাতা
মহাজন হিসাবের খোলে হালখাতা।
পুরাতন পঁচা বাসি এসব আজ বাদ
মা’র হাতে পাঁচনের রসনার স্বাদ।
দই চিড়া লাবন আর পিঠা পুলি খই
বটতলে মেলা বসে বড় হই চই!
বেত-ঝাঁকা টমটম কাঠ ঢোল বাঁশি
খোকা খুকু খুশি মুখে হাসি রাশি রাশি।
নতুনের ছোঁয়া পেয়ে রাঙা হয় মন
বোশেখের কোলে মায়া আদর যতন।
অশুভ জীর্ণ জরা জলে যাক ভেসে
প্রাণে প্রাণ মিশে থাক ভালোবেসে বেসে।
বোশেখে উজাড় করে হোক কথা বলা
আলোর পথে হোক আজীবন চলা।
ঐতিহ্য উৎসব
আহসানুল হক
যাক না মুছে জরা-গ্লানি
যাক মুছে যাক ক্লেদ
দু:খ-শোকে পড়ুক যতি
পড়ুক কেবল ছেদ !
নতুন বছর হোক শুরু আজ
পয়লা বোশেখ দিনে
কাচের চুড়ি, খেলনা-বেলুন
আনবে বাবা কিনে !
মুড়কি -মুড়ি, মণ্ডা-মিঠাই
মাটির পুতুল, ঘুড়ি -নাটাই
আজ পেতে চাই সব,
বাজবে যে ঢোল, বাজবে বাঁশি
ঠোঁটে ঠোঁটে প্রাণের হাসি
খুশির কলরব!
আজ বাঙালির বর্ষবরণ
ঐতিহ্য উৎসব !
বাংলাদেশের ফল
অপু বড়ুয়া
আম, জাম, জাম্বুরা
কলা জামরুল
ফলে ভরা এই দেশ
অতুল অতুল।
টসটসে লিচু আর
কাঁঠালের স্বাদ
একবার পেলে দেবে
সব ফল বাদ।
কোন ফল বাদ দেবে
সেরা সব ফল
আমড়া তেঁতুল দেখে
জিবে আসে জল।
বেল ফুটি তরমুজ
আনারস তাল
রসে টইটম্বুর
খেলে বেসামাল।
কুল পেঁপে পেয়ারায়
মন ফুরফুর
সফেদার কাছে মিছে
আপেল আঙুর।
সর্বজনীন লোক উৎসব
শচীন্দ্র নাথ গাইন
সর্বজনীন লোক উৎসব পহেলা বৈশাখ
সুরের তালে বাজতে থাকে ঢোল, বাঁশি ও ঢাক।
খুব সকালে শোভাযাত্রায় ছোটে হাজার লোক
কী যে দারুণ দেখতে লাগে কাড়তে থাকে চোখ।
গাঁ-গঞ্জে ফুটে ওঠে উছল খুশির রূপ
মহামিলন মেলায় যেতে কেউ থাকে না চুপ।
পুতুল নাচের আসর বসে গায় বাউল গান
নাগরদোলায় চড়তে আহা মন করে আনচান।
খই-বাতাসা মুড়কি-মুড়ি খাওয়ার পড়ে ধুম
যায় হারিয়ে দূর অজানায় ক্লান্তিমাখা ঘুম।
পান্তা-ইলিশ খেতে ভীষণ সবার বাড়ে ঝোঁক
ডিসকো-ডিজে দূরে ঠেলে বাজায় বেশি ফোক।
মউ মউ মউ গন্ধ বিলায় রকমারি ফল
ভোর থেকে মাঝ রাত্রি নামে আমজনতার ঢল।
সাজ বাহারি পোশাক-আশাক রং ঝুরঝুর দিন
খুশির জোয়ার বইতে থাকে বাজে হৃদয় বীণ।
বৈশাখ আনে নতুন বছর
কাসেম আলী রানা
বৈশাখ এলো খালে- বিলে
নদী পাহাড় জলে,
বৈশাখ এলো ঘরের চালে
আম্র মুকুল ফলে।
বৈশাখ আনে নতুন বছর
নতুন দিনের আশা,
পালিয়ে যাবে দুষ্টরা সব
জীবন হবে খাসা।
খোকা-খুকু চলো চলো
লালদিঘীতে যাই,
মেলা থেকে কিনবো ঘোড়া
যুদ্ধে যেতে চাই।
নববর্ষের মেলা
শাহজালাল সুজন
বছর ঘুরে নতুন সাজে
নববর্ষ আসে,
খুকুমণি মেলায় যাবে
স্বপ্ন চোখে ভাসে।
পান্তা ভাতে চুমুক দিয়ে
ইলিশ ভাজা খেয়ে,
বাবার সাথে মেলাতে যায়
বৈশাখী গান গেয়ে।
কিনবে খুকু চুড়ি ফিতা
আরও কিনবে শাড়ি,
হাতি ঘোড়া বাদ দেয়নি
শেষে কেনে গাড়ি।
নাগরদোলায় চড়ে খুকু
হাওয়ার সাথে ওড়ে,
নববর্ষের মেলা থাকুক
সারা বছর জুড়ে।
মন
শাহীন খান
মিহি বাতাসের সুরে
মন চলে যায় দূরে
গ্রীষ্ম এবং বাদল ধারায়
ভাসে সমুদ্দুরে।
চোখের নীলে স্বপ্ন হয়ে
হাজার তারার ঝিলিক বয়ে
মন হয়ে যায় কবি
ভালো লাগার দেয় যে দোলা
বাংলা মায়ের ছবি।
ছয়টি ঋতুর আলিঙ্গনে
পাখির মধুর আলাপনে
মন হয়ে যায় পাখনা
সুখ সুরভি মৌ-প্রকৃতি
খুঁজতে এ মন থাক না।
চেতনা
মাসুম মোরশেদ
বৈশাখ এলো পাড়া পাড়ায়
বৈশাখ গ্রাম জুড়ে
শহর জুড়ে বৈশাখ দেখি
সবাই ফুরফুরে।
নয়া দিনের নয়া গল্প
শুনি সবার মুখে
একাত্ব হই সেসব জেনে
অসুর দেবো রুখে।
রক্ত দিয়ে কেনা এদেশ
বেহাত কেন করি
স্বাধীনতার সেই চেতনা
বুকে যেন ধরি।