বেঁচে আছে বাঙালিরা
জসীম মেহবুব
আমার ভাষাতে আমি কত কথা কব,
কত ভাব-ভালোবাসা হবে নব নব।
আমার কান্না-হাসি ছোঁবে যে আমাকে,
এ ভাষায় প্রকাশের কত কথা থাকে।
তা না হলে বোবা হয়ে থাকা যায় নাকি?
ভুল কথা বলে দিতে চেয়েছিল ফাঁকি।
বাংলাকে উর্দু বা আরবীতে লিখে,
চেয়েছিল এই ভাষা হয়ে যাক ফিকে।
সেদিন দামাল ছেলে উঁচু করে বাহু,
রোখে ছলচাতুরী ও রুখে দেয় রাহু।
রাজপথ রঞ্জিত হয় তাজা খুনে,
ইতিহাস লেখা হয় মাস ফাল্গুনে।
প্রাণপ্রিয় এই ভাষা ঠাঁই পায় বুকে,
বেঁচে আছে বাঙালিরা সব সুখেদুখে।
একুশ এলে
সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার
একুশ এলে আমার বুকের বাগান জুড়ে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙা গোলাপ ফোটে
প্রাণের আলো ছড়িয়ে আবার নতুন ভোরে
বর্ণমালার হাসি নিয়ে সূর্য ওঠে।
একুশ এলে ঝরে মায়ের অশ্রুকণা
অশ্রুকণায় পবিত্র হয় মায়ের ভাষা
তোমার আমার চেতনাতে আগুন লাগে
মনের কোণে ঝিলিক মারে স্বপ্ন আশা।
একুশ এলে বাংলা হাসে প্রাণের ছোঁয়ায়
রচিত হয় বাংলাভাষার গৌরব গাথা
আমার ভাইয়ের তাজা রক্তে জীবন রাঙে
বীরদর্পে উন্নত হয় জাতির মাথা
একুশ আমার আত্মপরিচয়ের দিন
থাকবো বেঁচে নিয়ে ভাইয়ের রক্তঋণ।
রঙবাহারি বসন্ত
কাব্য কবির
শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া
বসন্তেরই ফুল,
হিমেল হাওয়ার পরশ লেগে
দুলছে দোদুলদুল।
ক্যামেলিয়া, রক্তকাঞ্চন
অশোক, গামার, জুঁই,
ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথি
নিয়ে সুতা সুঁই।
মনিমালা, স্বর্নশিমুল
পালাম, নাগেশ্বর,
দেখায় হাসি মুগ্ধকরা
নাচায় মনের ঘর।
ফুল কুড়িয়ে বসন্ততে
ভরে রাখি ডালা,
রঙবাহারি বসন্তের ফুল
কমায় মনের জ্বালা।
ফাগুন এলো
নকুল শর্ম্মা
ফাগুন এলো গানে গানে
ফুলের বনে প্রাণে প্রাণে
ফোটে নতুন হাসি,
বইছে বাতাস সকাল দুপুর
গাইছে পাখি মিষ্টি মধুর
খুশি রাশি রাশি।
জারুল বনে প্রজাপতি
পথ হারানো চলার গতি
স্বপ্ন রঙিন পাখায়,
সারাটা দিন ফুলে ফুলে
নাচের তালে দুলে দুলে
পরাগ মাখে মাথায়।
বর্ণমালা
সুশান্ত কুমার দে
বর্ণমালা বর্ণমালা কী করে যে ভুলি ?
তুই তো আমার স্বাধীনতার রাঙানো রং তুলি!
বর্ণমালা বর্ণমালা কী করে যে ভুলি ?
তুই তো আমার ভোরের পাখি কিচিরমিচির বুলি।
বর্ণমালা বর্ণমালা কী করে যে ভুলি ?
তুই তো আমার ছোট্ট শিশুর সদ্য ফোটা বুলি।
বর্ণমালা বর্ণমালা কী করে যে ভুলি ?
তুই তো আমার বাংলাদেশের সোঁদা গন্ধের ধূলি।
বর্ণমালা বর্ণমালা কী করে যে ভুলি ?
তুই তো আমার গল্পের আসর ঠাকুরমা‘র ঝুলি।
বর্ণমালা বর্ণমালা কী করে যে ভুলি?
তুই তো আমার ফসল ভরা সবুজ গ্রামগুলি !
মায়ের মুখের ভাষা
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
নেই কওয়া নেই কথা কোনো অতর্কিত এসে
মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে চায় রে নিতে কে সে?
কে সে ধরে মুখের কথার লাগামখানা টানি
বন্ধ করতে চায় রে বলো কে সে মা ডাকখানি?
মা ডাকখানি বড়ই মধুর বড়ই আপন প্রিয়
প্রাণ জুড়ানো মন জুড়ানো কী আদরনীয়!
সুখ দুঃখ এই ভাষাতেই লোকসান আর লাভ
এই ভাষাতেই কথা বলে প্রকাশ করি ভাব!
এই ভাষাতে সকাল বিকাল সারাটি দিন রাত
এই ভাষাতে দু‘চোখ খোলে নতুন সুপ্রভাত।
এই ভাষারই জন্য ঝরে বুকের তাজা খুন
এই ভাষারই জন্য রাঙা রং লাগা ফাল্গুন।
বুকের ভেতর কষ্টে রাঙা জাগা শহীদ স্মৃতি
এই ভাষাতেই শহিদ মিনার স্মরণে সম্প্রীতি।
শোক শ্রদ্ধা ভালোবাসার হাওয়া বুকে দোলে
এই ভাষা প্রাণ, বাংলা ভাষা বিশ্বদুয়ার খোলে।