চিড়িয়াখানায় সারা

কামরুল হাসান বাদল »

বাবা পত্রিকা পড়ছিলেন। সারা বাবার কাঁধের ওপর ভর দিয়ে খানিকটা ঝুঁকে বলল,
কী পড়ছো বাবা?’
আর তখনই তার চোখে পড়ল একটি শিরোনাম, ‘চিড়িয়াখানার নতুন অতিথি ক্যাঙারু ও লামা।’
এটুকু পড়ে সারা প্রশ্ন করল,
‘বাবা লামাটা কী?
পত্রিকা থেকে চোখ না তুলে বাবা বললেন, ‘লামা হচ্ছে অনেকটা উটের মতো। আমি অবশ্য এখনো সামনে থেকে দেখিনি। পত্রিকায় তো সেরকমই লিখেছে।’
‘তো ক্যাঙারু আর লামা কি চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসছে?’ প্রশ্ন সারার।
‘ওর প্রশ্ন শুনেছো?’
পত্রিকাটি টেবিলে রাখতে রাখতে পাশের সোফায় বসে পাঠরত সারার মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বাবা।
‘আরে বাবা বেড়াতে আসবে কেন? ওদের হল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়েছে। এখন ওরা চিড়িয়াখানাতেই থাকবে। ওদের দেখতে অনেক লোক যাবে, আনন্দ পাবে। কর্তৃপক্ষ এসব ভেবে এই প্রাণীগুলো আমদানি করেছে। পত্রিকায় লিখেছে, লামা দুটোর সঙ্গে দেড় বছর বয়সী চারটা বাচ্চাও আছে।’
বাবা শান্ত স্বরে বুঝিয়ে বলেন।
‘ওরা কোথায় থাকবে?’
‘কেন? খাঁচায় থাকবে। অন্য প্রাণীদের মতো।’
‘খাঁচায় পুরে রাখলে অতিথি কীভাবে হলো?’
সারার এই প্রশ্নে বাবা-মা দুজনেই চমকে ওঠেন কিš‘ উত্তর খুঁজে না পেয়ে পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন তারা।
‘এবার আমাকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যেতে হবে। কভিডের সময় মা বলেছিলে সবকিছু চালু হলে আমায় চিড়িয়াখানা দেখাতে নিয়ে যাবে।’
মেয়ের প্রশ্নে বিহ্বল মা বলেন,
‘নিয়ে যাব মা।’
ওরা যখন চিড়িয়াখানায় ঢুকলো তখন বিকেল প্রায় চারটা। অক্টোবরের মাঝামাঝি কিন্তু গরম পড়ছে অস্বাভাবিক। এরই মধ্যে ঘেমেটেমে অ¯ি’র লাগতে শুরু করেছে।
মা বললেন,
‘আমরা খানিকটা পরে এলেই ভালো করতাম।’
‘চিড়িয়াখানা ঘুরে আমরা তো পার্কে ঢুকব। সেখানে সারা রাইডে চড়বে। তারপর কোনো হোটেলে রাতের খাবার খাব।’ চিড়িয়াখানার চারদিকে তাকাতে তাকাতে বাবা বললেন।
চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই ছোট্ট এক টুকরো বাগান। তার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল তারা। সারার গাল দুটো টিপে দিয়ে বাবা বললেন,
‘ঠিক আছে মা আজকের কর্মসূচি?’
সারা বলল, ‘লাভ ইউ বাবা।’
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় ফয়’স লেক। সেখানে পাহাড়ের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল একটি কৃত্রিম হ্রদ। জায়গাটি বাংলাদেশ রেলওয়ের। মূলত রেলওয়ের কোয়ার্টারগুলোতে পানি সরবরাহের জন্য মি. ফয় নামের এক ব্রিটিশ এই লেকটি গড়ে তুলেছিলেন। ফলে তাঁর নামেই লেকটির নামকরণ করা হয়েছে ফয়’স লেক। এখন একটি বেসরকারি কোম্পানি সেখানে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক গড়ে তুলেছে। এতে শিশুদের জন্যে অনেক ধরনের রাইড বা আনন্দ উপভোগের সুবিধা আছে। এরই পাশে পাহাড়ি জায়গায় কয়েকবছর আগে এই চিড়িয়াখানাটি গড়ে তুলেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
চিড়িয়াখানা ঘুরে সেই পার্কে ঢুকবে, তারপর রাতে কোনো হোটেলে খাওয়াদাওয়া করে বাসায় ফিরবে এমন একটি প্ল্যান করে বেরিয়েছে তারা।
মা একটা টিস্যু দিয়ে সারার ঘেমে ওঠা মুখ মুছে দিতে দিতে বললেন, ‘তাহলে আর দেরি কেন? সামনে এগোই।’
প্রথমেই তারা এসে দাঁড়াল একটি পাখির খাঁচার সামনে। খাঁচাটা বেশ বড় এবং উঁচু। হরেক রকমের পাখি সেখানে। সারা লক্ষ্য করল খাঁচার বাইরে পাখিদের নাম লেখা আছে তবে এত উঁচুতে যে তার পক্ষে পড়া সম্ভব হচ্ছে না। একটা পাখি দেখে খুব মুগ্ধ হলো সারা। কী সুন্দর গায়ের রং। এর পাশে ফুড়ুৎ করে উড়ে এসে বসলো কয়েকটি ছোট পাখি। চড়ুই পাখির মতো ছোট কিš‘ দেখতে কত সুন্দর।
‘বাবা এই পাখিটার নাম কী?’
বাবা বললেন, ‘জানি না তো!’
সারা খাঁচার সামনে হাঁটতে হাঁটতে দেখল কত নানা জাতের পাখিতে পূর্ণ খাঁচাটি। একটি ছোট্ট পাখি উড়ে এসে বসল তার সামনে। সারার খুব ইচ্ছে হলো হাত বুলিয়ে আদর করার। কিন্তু তা সম্ভব নয়। অগত্যা পাখিটিকে বলল সে,
‘খাঁচার মধ্যে থাকতে ভালো লাগে না তোমার?’
পাখিটি উড়ে গেল জবাব দিল না।
পাখির খাঁচার উল্টো দিকে বানরের খাঁচা। দুটো শোবার ঘরের মতো আয়তন হবে হয়ত। সারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। বড় বানরের সঙ্গে কয়েকটি ছোট্ট বানরও আছে। ওদের বাচ্চা হবে হয়ত। দেখতে কিউট লাগছে।
এবার এসে আরেকটি পাখির খাঁচার সামনে দাঁড়াল তারা। পাখিটি বিশাল। এত বড় পাখি এর আগে কখনো দেখেনি সারা। এবার পাখির নামটা পড়তে পারল। উট পাখি। উটের মতো পাখিটির মেরুদণ্ডের মাঝখানটি বেশ উঁচু। এজন্যই এটার নাম উটপাখি তা বুঝতে পারে সে। খাঁচায় দুটো পাখি আছে। কিš‘ তাদের খাঁচাটি এত অপরিসর যে সারার মনটা খারাপ হয়ে গেল। খাঁচার কয়েক হাত জায়গার মধ্যে হাঁটাহাঁটি করা ছাড়া উটপাখি দুটোর আর কিছু করার নেই।
এটার পরেই আছে আরেকটি লাজুক বানরের খাঁচা। একটি বানর তার বাচ্চাটাকে নিয়ে নেটে ওঠানামা করছিল। সারা দেখল, এক দর্শনার্থী ঘাসজাতীয় কিছু একটা দিয়ে বানরটিকে লোভ দেখাচ্ছে। গ্রিলের বাইরে হাত বাড়িয়ে নিতে গেলে লোকটি তা সরিয়ে নেয়। এভাবে বানরটিকে বারবার বোকা বানাতে দেখে তার মেজাজটি খুব খারাপ হয়ে গেল।
‘আঙ্কেল আপনি বানরটিকে বিরক্ত করছেন কেন?’
নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রতিবাদটুকু করেই ফেলে সারা।
একটি শিশুর মুখে এমন কথা শুনে লোকটি দমে গেল। হাতের ঘাসটুকু ফেলে দ্রুত এগিয়ে গেল অন্য খাঁচার দিকে।
পরের খাঁচায় দেখা পাওয়া গেল বাঘের। লেখা আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাবা বললেন, ‘দেখো বাংলাদেশের জাতীয় পশু।’
সারা বলল, ‘সে জন্য আমাদের ক্রিকেট দলকে টাইগার বলে?’
‘হ্যাঁ, ক্রিকেট বোর্ডের লোগোতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবি আছে। তাই বাংলাদেশ জাতীয় দলকে টাইগার বলে থাকে।’ বললেন বাবা।
কিš‘ খাঁচার ভেতর অলসভাবে শুয়ে থাকা তিনটি বাঘকে দেখে টিভিতে দেখা দুরন্ত, ছুটন্ত ক্ষিপ্র গতির রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে মেলাতে পারল না সে। দেখে মনে হলো স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শকদের হাতে দেখা ডামি বাঘ যেন।
সিংহের খাঁচায়ও দেখা গেল দুটো সিংহ মুখোমুখি বসে আছে।
সারার বাবা বললেন,
‘প্রচণ্ড গরম, তার ওপর দুপুরবেলা তাই ঝিমুচ্ছে।’
মা হেসে উঠলেন বাবা কথা শুনে।
একেতো প্রচণ্ড গরম তার ওপর খাঁচাবন্দী প্রাণীদের দেখে চিড়িয়াখানা দেখার আগ্রহ দমে গেল সারার। কিন্তু সিংহের খাঁচার উল্টো দিকে হরিণের দেখা পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল সে। মেয়েকে ঘুরতে দিয়ে পিছে পিছে তাকে অনুসরণ করছিল মা-বাবা দুজনে।
মোটামুটি সামান্য বড় এই খাঁচায় অনেকগুলো হরিণ। নাম লেখা আছে চিত্রা হরিণ। লোহার গ্রিলের খুব কাছে গিয়ে তাদের দেখতে লাগল সে। তাদের এই খাঁচায় ছোট দুটো গাছ আছে তবে তা এই গরম থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়। দেখে বোঝা গেল গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে তারা। খানিকটা দূর থেকে দেখল একটা হরিণ বসে আছে একেবারে গ্রিলের পাশ ঘেঁষে। হাত গলিয়ে দিলে ধরা যাবে এমন দূরত্বে।
একদম কাছে গিয়ে দাঁড়াল সারা। হরিণের মায়াবি চোখের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকল সে। বুঝতে পারছে বুকের ভেতর একধরনের অনুভূতি হচ্ছে তার।
‘তোমার কষ্ট হচ্ছে হরিণ?’
ফিসফিসিয়ে বলল সে যাতে অন্য দর্শকরা শুনতে না পায়।
সারা দেখল তার প্রশ্নে হরিণের কানদুটো খাড়া হয়ে উঠল। মনে হলো সে যেন মনোযোগ দিয়ে শুনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
‘এখানে তোমাদের খুব কষ্ট তাই না?’
আবার বলল সারা।
মাথা দোলাল হরিণটি। মানুষ যেভাবে মাথা দুলিয়ে সম্মতি দেয়।
‘তোমাদের কি আবার বনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে?’
মাথা দুলিয়ে আবারও হ্যাঁ বলল চিত্রা হরিণ।
এ সময় সারা কাঁধে হাতের স্পর্শ অনুভব করে। পেছনে তাকিয়ে দেখে মা-বাবা দুজনই তাকিয়ে আছে তার দিকে।
বাবা বলল, ‘তুমি নিজে নিজে কার সঙ্গে কথা বলছো?’
‘বাবা দেখো হরিণের চোখ দুটো কী সুন্দর!’
বাবার কথার উত্তর না দিয়ে হাত উঁচিয়ে হরিণগুলোকে দেখায় সে।
মা টিস্যু দিয়ে সারার মুখের ঘাম মুছে দেন।
‘আমি আর ঘুরব না মা।’ বলে সে।
মা-বাবা দুজনই একসাথে বলে ওঠেন,
‘ঘুরব না মানে? তুমি না চিড়িয়াখানা দেখবে বলে এত আগ্রহ নিয়ে এলে।’
‘ভালো লাগছে না মা। চলো বেরিয়ে যাই।’
বাবাও বললেন,
‘তাহলে ঠিক আছে। চল বেরিয়ে যাই। গরমে বোধহয় ওর খারাপ লাগছে।’
তিনজনই বেরিয়ে এসে বাইরে দাঁড়াল। বাবা সামনে পার্কটি দেখিয়ে বললেন,
‘এবার আমরা ওই পার্কটিতে যাব। ঠাণ্ডা কিছু খাব। চল যাই- বলে পা বাড়ালেন বাবা। মা তাকে অনুসরণ করতে গিয়ে খেয়াল করলেন সারা দাঁড়িয়ে আছে, নড়ছে না।
মা বললেন, ‘চল মা পার্কে ঢুকি।’
‘আমি আর কোথাও যাব না মা। চলো বাসায় চলে যাই।’
মেয়ের এই আকস্মিক পরিবর্তনে অবাক হয় দুজনেই। বাবা এসে কপালে হাত দিয়ে বলেন,
‘তোমার শরীর খারাপ লাগছে মা?’
সারা মাথা নাড়ে।
‘না, আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।’
‘তুমি না বলেছিলে পার্কে যাবে। রাতে আমরা হোটেলে খাব। এখন কী হলো তোমার?’ মা খুব উৎকণ্ঠা নিয়ে বললেন।
‘বাসায় চল। আমার ভালো লাগছে না।’
অগত্যা একটা টেক্সি ডেকে ওরা পথ ধরল বাসার ।
পরেরদিন ছিল ছুটির দিন। বিকেলে চা খেয়ে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখছিলেন বাবা। পাশে মা বসে পত্রিকা পড়ছিলেন।
সারা মা-বাবার মাঝখানে বসতে বসতে বলল,
‘আচ্ছা আমাকে বলো তো চিড়িয়াখানা কি সব দেশেই আছে?’
মা বললেন, ‘হ্যাঁ প্রায় দেশেই আছে। ঢাকায় যে চিড়িয়াখানা আছে সেটা চট্টগ্রামের চেয়ে অনেক বড়। কলকাতারটি আরও বড়। থাইল্যান্ডেরটা তারচেয়েও বড়। উত্তর আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনার চিড়িয়াখানা সম্ভবত সবচেয়ে বড়। অবশ্য এটা নিয়ে বিতর্কও আছে।’
‘আচ্ছা মা প্রথম চিড়িয়াখানা কোনটি?’
মা একটু ভেবে বললেন, ‘সম্ভবত ১৭৯৩ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে আধুনিক চিড়িয়াখানা গড়ে তোলা হয়েছিল।’
‘আচ্ছা সারা তুমি কাল চিড়িয়াখানায় গিয়ে এমন করলে কেন? আমাদের আনন্দটা মাটি করে দিলে’
-আহত কণ্ঠে এবার বাবা বললেন।
‘বাবা, তুমিই তো কয়েকদিন আগে আমাকে কী সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছিলে কেন বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে বলা হয়। বলো না? বলেছিলে না?’ বাবাকে প্রশ্ন করে সারা।
‘হ্যাঁ, বলেছি তো।’
‘তাহলে এত এত বন্যপ্রাণীদের ধরে এনে খাঁচায় পুরে রাখো কেন?’
‘মানুষ যেন তাদের চিনতে পারে। প্রাণিজগতের বিষয়ে ধারণা পায় তার জন্যই তো এই ব্যবস্থা।’
‘কেন বাবা এখন তো টিভিতে কত চ্যানেল আছে সেখানে বন্যপ্রাণি নিয়ে কতকিছু দেখায়। তাতেই তো আমরা জানতে পারি। এখন আর চিড়িয়াখানার দরকার কী?’ বাবাকে থামিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে সে।
‘পৃথিবীর অনেক জায়গায় চিড়িয়াখানা আছে সেখানে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ ভিজিট করে। এটা এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে।’ বাবা বলে।
‘বাবা কভিডের সময়ে পৃথিবীর মানুষ যখন ঘরবন্দী হয়ে পড়েছিল তখন মানুষের কেমন লেগেছিল মনে আছে? তা তো ছিল কয়েকমাস মাত্র। তাতেই সবাই কেমন অ¯ি’র হয়ে উঠেছিল। আর বছরের পর বছর এতগুলো বন্যপ্রাণিকে ধরেবেঁধে খাঁচায় পুরে রাখছো তাদের কেমন লাগে ভেবে দেখেছো?’
মেয়ের কথা শুনে মা-বাবা দুজনই অবাক হয়ে যায়। একজন প্রাপ্ত বয়স্কের মতো কথা বলছে সারা। বাবা বলেন, ‘তুমি এই বয়সেই এতকিছু ভাবো?’
‘কেন ভাবব না বাবা? আমি এখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। অনেককিছু জানি।’
‘বাবা আমার একটা কাজ করে দেবে? সারা আর্দ্র কণ্ঠে বলে আবার।
‘আমাকে কয়েকটি বোর্ডপেপার এনে দেবে? বড় সাইজের।’
‘তা দিয়ে কী করবে?’
‘ছবি আঁকব।’
‘কাল অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসব।’ সারাকে আশ্বস্ত করেন বাবা।
কয়েকদিন পরের ঘটনা। সন্ধায় বাবা টিভি দেখছিলেন ঘরে। মা-ও ছিলেন সেখানে। সারা তিনটি বোর্ড নিয়ে হাজির হল। বলল, ‘তোমরা দেখো আমি কী এঁকেছি।’
বলে একটা একটা খুলে দেখালো।
প্রথম ছবিতে দেখা গেল লোহার গারদের ভেতর একটি হরিণছানা। পাশে লেখা ‘আমাকে বনে যেতে দাও।’ ছবির একদম ওপরে লেখা ‘চিড়িয়াখানা’ শব্দটি।
পরেরটাতে দেখা গেল খাঁচার ভেতর অনেকগুলো প্রাণি। তাতে লেখা হয়েছে, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।’
সবশেষেরটায় চিড়িয়াখানার ছবি এঁকে লিখেছে, ‘পৃথিবীর সব চিড়িয়াখানা থেকে প্রাণিদের মুক্ত করে দাও।’
বাবা বললেন, ‘খুব চমৎকার এঁকেছো। এই আইডিয়া তুমি পেলে কোথায়? খুব ভালো হয়েছে।’
‘বাবা চলো তোমরা যেখানে মানববন্ধন করো সেই চেরাগী পাহাড়ে গিয়ে তিনজন এই দাবি নিয়ে দাঁড়াব। মা তুমি যাবে তো?’
বাবা খুব আগ্রহ নিয়ে বললেন, ‘অবশ্যই যাবে। কাল বিকেলেই আমরা তিনজন মিলে মানববন্ধন করব। কেউ আসুক বা না আসুক আমরা দাঁড়াব।’
তারপরদিন বিকেলে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় চত্বরে দেখা গেল একটা মানববন্ধন। সারার প্ল্যাকার্ডের পাশে ওর বাবা একটা প্রিন্টেড ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে লেখা-
Freedom for animal.
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তিনজনের মানববন্ধনে অনেকে যোগ দিলেন। ক্রমে ক্রমে তা বিশাল আকার ধারণ করল। একটি শিশুর নতুন ও অভিনব এমন দাবি অনেককে খুব আগ্রহী করে তুলল। দেখতে দেখতে অনেক সাংবাদিক উপস্থিত হলেন।
তারা সারাকে অনেক প্রশ্ন করলেন। সে খুব গুছিয়ে উত্তর দিল। যে কথাগুলো বাবা-মাকে বলেছিল তাই বলল সাংবাদিকদের। অবশেষে বলল, ‘বাবা বলবে বাকিটুকু।’
ওর বাবা বললেন, ‘ওর ভাবনার সঙ্গে আমরা একমত। চিড়িয়াখানায় প্রাণিদের খাঁচাবন্দী করে রাখা আর নয়। ওদের মুক্ত জীবনে যেতে দেওয়া হোক। আমাদের দাবি, ‘Freedom for animal.’
‘আজ না হোক কাল পৃথিবীর সভ্য মানুষ তাদের এই নির্দয় আচরণের জন্য অনুতপ্ত হবে নিশ্চিত।’
যোগ করে সারার মা।
ততক্ষণে সারাকে ঘিরে ধরেছে অনেকে। সবাই বলছে সারার এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেবে সমগ্র দেশে এমনকি বিদেশেও।