সুপ্রভাত ডেস্ক »
চিকিৎসা সহযোগিতা বাড়াতে আগামী মাসেই চীনের সাথে বেশকিছু সমঝোতা স্মারক সই করবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আমন্ত্রণে ১৯ থেকে ২১ এপ্রিল ঢাকা সফর করবে চীনের একটি ডেলিগেশন টিম। ইতোমধ্যে রোগী ও স্বজনসহ ৩১ জনের একটি দলকে বিনামূল্যে দেশটির কুনমিং প্রদেশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সার্বিক উদ্দেশ্য হলো, চিকিৎসা ক্ষেত্রে আগ্রহ বৃদ্ধি। খরচ কমানোর পাশাপাশি সেবা জোরদারে কাজ করবে দু’দেশের নীতিনির্ধারকরা।
উত্তরবঙ্গের পাবনায় বাস ৮ বছর বয়সী শিশু ইয়ামিনের। শিশুটি হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলো। রাজধানীর বেশকিছু হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও সঠিক সমাধান মেলেনি। তবে, ফার্নিচারের দোকানে কাজ করা ইয়ামিনের বাবা রিপন মিয়ার জন্য আশার সঞ্চার হয়ে এলো বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস।
ইয়ামিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়াসহ তাকে চীনের কুনমিংয়ে অবস্থিত ফুওয়াই ইউনান হাসপাতালে নিয়ে আসে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। সেখানেই চলমান শিশুটির নিবিড় চিকিৎসা। ইয়ামিনের মত আরেক শিশু সাজিদ। সে-ও ভুগছে হৃদরোগের জটিলতায়। ইয়ামিনের মতো তাকেও একই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে চীনা দূতাবাস।
শিশু দু’টির সাথে আসা তাদের স্বজনরা জানান এখানকার পরিচর্যা ও সেবার মানে বেশ খুশি তারা। সন্তানকে একেবারে সুস্থ অবস্থায় সঙ্গে নিয়ে নিজ দেশে ফেরার অপেক্ষা তাদের।
রোগীর সঙ্গে আসা তাদের এক অভিভাবক বলেন, এখানে আসার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সেবার মান দেখে আমরা বেশ খুশি। আমরা আশাবাদী চিকিৎসা শেষে আমাদের বাচ্চাকে সুস্থ অবস্থায় দেশে নিয়ে যেতে পারবো।
আরেকজন বলেন, আমি ফিলিপাইন থেকে এসেছি। আমার বাচ্চার হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম। এখানকার চিকিৎসকরা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। আমি নিজেও আমার সন্তানের শারীরিক অবস্থান উন্নতি দেখছি। এখানে খরচও বেশ সহনীয়।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ থেকে ১৪ রোগী, তাদের স্বজন, চিকিৎসক, এজেন্সির সদস্যসহ ৩১ জন পৌঁছেছেন চীনে। যাতায়াত, চিকিৎসা খরচ, ভাষা, খাদ্য নিয়ে অনেকেই ছিলেন শঙ্কায়। যা, নিরসনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল ইসলাম বলেন, আগামী মাসের ১৯ থেকে ২১ তারিখ মাননীয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে যাবে এখানকার একটি ডেলিগেশন টিম। বেশ কয়েকজন চিকিৎসকও যাবেন। সেখানে কিছু সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে যার ফলে দু’দেশের চিকিৎসকদের মাঝে একটি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
হাসপাতালটির চিকিৎসকরাও সেবা ও সহায়তা প্রদানে যেন নিবেদিত প্রাণ। রোগীদের সাথে আন্তরিকতা প্রদর্শনেও তারা বেশ এগিয়ে। এক চিকিৎসক বলেন, আমরা রোগীদের ক্ষেত্রে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি তাদের সমস্যাগুলো নিরূপণ করে যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে। কম খরচে সবচেয়ে ভালো সেবা প্রদানে আমাদের সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশিরা এখানে আসলে আমরা তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সহযোগিতা করবো।
কুনমিং প্রদেশের সেরা হাসপাতালগুলোর মধ্যে ফুওয়াই ইউনান হাসপাতাল, চাইনিজ একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। এছাড়া, দি ফার্স্ট পিপলস হাসপাতাল অব ইউনান প্রোভিন্স, দি ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতাল অব কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটিসহ ৪টি হাসপাতালে দেয়া হয় বাংলাদেশিদের বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা।
উল্লেখ্য, খরচ কমানো গেলে, বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য নতুন আরও একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে— এমনটাও মনে করছেন কেউ কেউ।