বাংলাদেশে প্রতিবছর বর্ষায় চন্দ্রবোড়া, গোখরা, কাল কেউটে, কিং কোবরা ও সবুজ বোড়ার মতো সাপের কামড়ের ঘটনা বাড়ে। চিকিৎসকের বদলে কবিরাজ বা ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভরতার কারণে প্রতিবছর ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। সাপে কাটার শিকার হন প্রায় ছয় লাখ মানুষ। জরিপ অনুযায়ী, ৮৬ শতাংশ রোগী অপচিকিৎসার শিকার হন, মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ হাসপাতালে যান।
বাংলাদেশে প্রায় ৮০টি সাপের প্রজাতি রয়েছে, এর মধ্যে ছয়টি বিষধর। ভেনম রিসার্চ সেন্টারে এসব সাপ সংগ্রহ করে গবেষণা চলছে। চমেকের সহযোগিতায় গবেষণায় যুক্ত রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন, মেডিসিন টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ ও জার্মানির গ্যেটে বিশ্ববিদ্যালয়।
চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম (প্রতিষেধক) তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে এই ভেনম রিসার্চ সেন্টার। জানা গেছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে সাপের বিষ থেকে সংগৃহীত অ্যান্টিবডি ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। পরীক্ষায় সাফল্য এলে পরবর্তী ধাপে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পথে এগোবে গবেষণা। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেও প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। একটি পত্রিকার বরাতে জানা গেছে, এক বছর ধরে কোনো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় গবেষণা কার্যক্রম কার্যত থমকে গেছে।
এক বছর ধরে অপারেশনাল প্ল্যান বন্ধ থাকায় গবেষণার মূল তহবিল বন্ধ হয়ে গেছে। আগে বছরে এক কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পেত প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এখানে গবেষকসহ বেতনভুক্ত কর্মী রয়েছেন ১৫ জনের মতো। জায়গার অভাব, ল্যাবরেটরির সংকট, যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে থাকা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে।
চমেক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং ভেনম রিসার্চ সেন্টারের মুখ্য গবেষক অনিরুদ্ধ ঘোষ এ বিষয়ে বলেন, ‘সচিব বরাবর চিঠি দিয়ে আমরা এই গবেষণাকে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছি। কীভাবে এটি পরিচালিত হতে পারে, সেই অর্গানোগ্রামও জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যেসব অ্যান্টিভেনম ব্যবহৃত হয়, তা ভারতের তৈরি। কিন্তু অঞ্চলভেদে বিষের গঠন ও বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য থাকায় এসব ওষুধ সব ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। দেশীয় ১০ ধরনের বিষধর সাপের অ্যান্টিভেনম তৈরির লক্ষ্যেই আমাদের এই গবেষণা।’
২০১৭ সালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সাপে কাটাকে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের অবহেলিত ট্রপিক্যাল রোগ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। এর এক বছর পরে ২০১৮ সালের মার্চে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে ভেনম রিসার্চ সেন্টার। এর পরিপ্রেক্ষিতেই শুরু হয় প্রতিষেধক তৈরির উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মক্ষম পরিকল্পনার (অপারেশনাল প্ল্যান) আওতায় চলছিল। প্রতিবছর কর্মীদের বেতন, সাপ সংগ্রহ, খাবার, যন্ত্রপাতি কেনাসহ গবেষণার যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ হতো অপারেশনাল প্ল্যানের বাজেট থেকে। পর্যায়ক্রমে পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতিও কেনা হয়।
এমন সম্ভাবনা তৈরি করে একটি প্রতিষ্ঠান মাঝপথে হোঁচট খাবে তা কখনো কাম্য নয়। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই।
চিকিৎসার সুযোগ ও গবেষণা বাড়াতে হবে
সাপের কামড়ে মৃত্যু বাড়ছে