চিকনগুনিয়া কমলেও বাড়ছে ডেঙ্গু

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নাদিয়া জান্নাত তাসকিয়া (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যুর খবর জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১২ নভেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়া তাসকিয়াকে মঙ্গলবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ওই দিনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৪ জন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ হাজার ৯৮৩ জনে। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৮ জন পুরুষ, ১ হাজার ১৭৬ নারী এবং ৭০৯ জন শিশু।
চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু ডেথ রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মারা যাওয়ার হার বেশি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু চিহ্নিত হওয়ার শুরুতেই চিকিৎসা শুরু না হলে অনেক সময় দ্রুত জটিল আকার ধারণ করতে পারে যা রোগীর মৃত্যুর শঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়।
অন্যদিকে আরেকটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীর বয়সই ৩০ বছরের কম।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের ক্ষেত্রে সাধারণত এই বয়সীদের সংখ্যা যেমন বেশি থাকে, তেমনি তাদের সেরে ওঠার হারও বেশি। তবে এক্ষেত্রে এই বছরের চিত্র এখন পর্যন্ত কিছুটা ভিন্ন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩০-এর কম বয়সী রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যই বেশি।

এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর খুব কম সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মৃত্যু হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
এর কারণ হিসেবে সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ায় ‘শক সিনড্রোম’ তৈরি হওয়ার কথা জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। এই বয়সসীমার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৫০০। বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মজীবী ও চলাফেরায় সক্রিয় শ্রেণিই মশার সংস্পর্শে বেশি আসছে, ফলে তাদের মধ্যে সংক্রমণও বেশি।
চলত বছরের জুলাই থেকে আগস্ট এবং চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই থেমে থেমে বৃষ্টি এবং তারপর প্রচণ্ড গরম ডেঙ্গুর বংশবিস্তারে ভূমিকা রাখে। নগরকেন্দ্রিক এই রোগ কমাতে মশার বংশবিস্তার রোধ জরুরি।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার পর মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
এরমধ্যে চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।