নিজস্ব প্রতিবেদক »
গরম পড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি। দিন-রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে চট্টগ্রামবাসী। অথচ চট্টগ্রামে চাহিদার তুলনায় প্রায় ছয়শ মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কারণে চট্টগ্রামে দৈনিক দুইশ থেকে তিনশ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) উৎপাদন ও ব্যয় সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, ৪ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রামের ১৯টি উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৬ মেগাওয়াট। আর সেদিন চট্টগ্রামে চাহিদা ছিলো ১ হাজার ৫২৩ মেগাওয়াট। তাই চট্টগ্রামে ২৬২ মেগাওয়াটের লোডশেডিং দিতে হয়েছে সংস্থাটিকে।
একইভাবে ৩ এপ্রিল বিকেলের তথ্যে চট্টগ্রামের ২০টি উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৯০৪ মেগাওয়াট। আর সেদিন চট্টগ্রামে চাহিদা ছিলো ১ হাজার ৪৪২ মেগাওয়াট। তাই চট্টগ্রামে ২৩২ মেগাওয়াটের লোডশেডিং দিতে হয়েছে সংস্থাটিকে।
জানা যায়, কাপ্তাইয়ের দুইটি ৪৬ মেগাওয়াটের প্লান্টসহ উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছে শিকলবাহার ৫৫ মেগাওয়াটের জুদায়েক, ২২৫ মেগাওয়াটের সিসিপিপি, ১০০ মেগাওয়াটের দোহাজারি, ১০০ মেগাওয়াটের হাটহাজারি, ২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট, ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড, ৩০০ মেগাওয়াটের জুলদা, ২৬ দশমিক ৭ মেগাওয়াটের আরপিসিএল, ৫০ মেগাওয়াটের বারাকা, ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক, ১০৫ মেগাওয়াটের শিকলবাহা-বারাকা, ১১০ বারাকা-কর্ণফুলী, ৩০০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড, ১১৬ মেগাওয়াটের এনলিমা, ১৬২ মেগাওয়াটের মিরসরাই বি-আর, ৩০ কক্সবাজার ওয়াইন্ড, ১৩২০ মেগাওয়াটের এস এস পাওয়ার এবং ৬০০ মেগাওয়াট মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করলে চট্টগ্রামের চাহিদা শতভাগ পূরণ করেও জাতীয় গ্রিডে আরও বেশি বিদ্যুৎ যুক্ত করা সম্ভব।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক পিডিবির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকার দুইটি বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো ছাড়া বাকি পাঁচটি চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দিয়ে তা সমন্বয় করতে হচ্ছে। এরমধ্যে সংকট বেশি রাখা হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে।
বিদ্যুতের সংকট নিয়ে কথা হলে বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামের বাচ্চু চৌধুরী বলেন, ‘গরম আসতে না আসতে বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। গরমে রাতে ঘুমাতে পারি না। দিনে কাজ করতে খুব অসুবিধা হয়। এ সমস্যার সমাধান না করলে আমাদের কষ্ট বাড়তে থাকবে।
নগরের নিউ-মনছুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা রুবেল বলেন, ‘দিন-রাত সমান করে ফেলছে। আইপিএসের চার্জ থাকে না। সমানভাবে বিতরণ না করে চট্টগ্রামকে বিদ্যুৎ কম দেওয়া হচ্ছে। সংকট চরমে থাকার পরও কোনো ধরণের সাশ্রয়ী নির্দেশনা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ চুপচাপ। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তীব্র হচ্ছে।’
এ বিষয়ে বিপিডিবি চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে উৎপাদন বেশি বলে অন্য বিভাগের সংকট পূরণে আমরা সহযোগিতা করতে পারছি। জাতীয় গ্রিড যেহেতু বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যয় হিসেব করে এবং নির্দেশনা দেয়, সেহেতু আমাদের নিয়ম মেনে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ করতে হয়। এখন যা একটু সংকট সৃষ্টি হচ্ছে; তবে মানুষের ভোগান্তি যাতে কম হয় সেভাবেই সমন্বয় করছি। এরপরও মানুষ বিদ্যুতের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। আশা করি, তা ঠিক করতে সরকার একটা ব্যবস্থা নেবে।’