রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
২০১৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রায় ৫ লাখ মানুষের উপজেলা মিরসরাইয়ে প্রথম শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের অনুমোদন দেন। শুরুতে ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হলেও মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে ব্যয়ও। এটি নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয় বারইয়ারহাট পৌরসভা। তবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রকল্পটি উদ্বোধন করার কথা থাকলেও চর্তুথবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটি বাস্তবায়িত হলে কমবে অগ্নি ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
জানা গেছে, উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়নে রয়েছে মাত্র একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। তাও সেটি দ্বিতীয় শ্রেণির। উপজেলার প্রথম কিংবা শেষ প্রান্তে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে মিরসরাই থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পৌঁছানোর আগেই আগুনে পুড়ে সব শেষ হয়ে যেত। তাই ৪৮২.৮৯ বর্গ কিলোমিটারের এই উপজেলায় প্রথম শ্রেণির একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের দাবি উঠে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিরসরাইয়ের প্রথম শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের অনুমোদন দেন। প্রাথমিক ব্যয় ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ধরে ২০১৯ সালে শুরু হয় কাজ। পরবর্তীতে স্টেশন ভবনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় আরো প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। ৬২ শতক জমিতে এটি নির্মাণের কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ফায়ার সার্ভিসকে ৪৪ শতক জায়গা বুঝিয়ে দেয়। এরপর চারবার বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্তু এখনো প্রকল্পের গেইট ও সড়ক নির্মাণকাজ বাকি রয়েছে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড ডিফেন্স সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসদর থেকে ১৫০ মিটার দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে স্থাপিত হচ্ছে প্রথম শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। শুধু প্রথম শ্রেণি নয় এটি হবে একটি মডার্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। যা থেকে উপজেলাবাসী সব ধরনের সেবা পাবে। থাকবে নার্স, অ্যাম্বুলেন্স ও ডুবুরিসহ সব ধরণের সুবিধা।
স্থানীয়রা জানান, মিরসরাইয়ে সম্পদ ও জনসংখ্যার বিবেচনায় একটি প্রথম শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মিরসরাইয়ে স্টেশন রোডে যে ফায়ার সার্ভিস রয়েছে সেটি দ্বিতীয় শ্রেণির। ফলে সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল উপজেলাবাসী। বারইয়ারহাটে প্রথম শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপিত হলে উপজেলায় অগ্নিকা-সহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকি রয়েছে গেইট ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ। সড়ক নির্মাণের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে প্রকল্প সংযোগ সড়কে বালি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।
প্রকল্পের ঠিকাদার হারুন অর রশিদ জানান, ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এখন বাকি রয়েছে গেইট ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ।
বারইয়ারহাট কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সোনা মিয়া সওদাগর জানান, উপজেলার বারইয়ারহাট, হিঙ্গুলী কিংবা করেরহাট এলাকায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে মিরসরাই থেকে ফায়ার সাভির্স কর্মীরা পৌঁছার পূর্বেই আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে যায়। তাই সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির সহযোগিতায় বারইয়ারহাটে একটি প্রথম শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৯ সালে স্টেশনটি নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। তাই অতি দ্রুত বারইয়ারহাট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি উদ্বোধন করা প্রয়োজন।
গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রাম-৩ এর সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে ব্যায়ও বাড়ানো হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে তার তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রাম-৩ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ফয়সাল আবেদীন জানান, কার্যাদেশে প্রকল্পটির মেয়াদ চতুর্থ দফায় বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে চলতি মেয়াদের আগেই কাজ শেষ হবে।