বছরে সংগৃহীত কাঁচা চামড়ার প্রায় অর্ধেকই ঈদুল আজহা থেকে আসে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিমুখী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পের মূল কাঁচামাল আসে এই ঈদ থেকে। তবে গত কয়েক বছরে তৃণমূল পর্যায়ের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত কম দাম দিতে চাওয়ায় বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বা মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা না পাওয়ায় এবং ব্যবসায়ীরা ট্যানারদের কাছ থেকে তাদের বকেয়া না পাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে দাবি তাদের।
গত দুই বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বেড়েছে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ। চলতি বছর চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলায় প্রায় তিন লাখ ৬১ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। জেলা-উপজেলায় লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে সংগৃহিত পশুর চামড়া।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত বছর চট্টগ্রামে তিন লাখ ১৯ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর আগের বছর (২০২২ সাল) সংগ্রহ হয়েছিল তিন লাখ ৪৩ হাজার ২৫০ পিস। চলতি মৌসুমে সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন লাখ। সংগ্রহ হয়েছে তিন লাখ ৬০ হাজার ৯৫০ পিস।
গত দুই বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বেড়েছে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ। চলতি বছর চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলায় প্রায় তিন লাখ ৬১ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে।
এবার ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দর ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই হিসাবে এক থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা দামের একটি গরুর চামড়ার দর অন্তত এক হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা। তবে চট্টগ্রামের কোথাও ৩০০ টাকার বেশি দামে চামড়া বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন কোরবানিদাতারা। একজন মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী কয়েক বছর লোকসান দেওয়ার কারণে এখন আর চামড়া ব্যবসা করেন না জানিয়ে বলেন, ‘চামড়া কেনার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছি।’ গরু কিনেছেন এক থেকে দেড় লাখ টাকায় অথচ চামড়া বিক্রি করেছেন দুই থেকে তিন শ টাকা দরে। তাদের মধ্যে দুইজনের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।
এছাড়া করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। ফলে, বিশ্ব জুড়ে চামড়াজাত পণ্য ও চামড়াজাত জুতার মতো বিলাসবহুল পণ্যের দাম ও চাহিদা দুটোই কমেছে।
চাহিদা ও দাম কমার এই প্রবণতা বাংলাদেশের কাঁচা চামড়ার বাজারে প্রভাব ফেলেছে। ফলে দেশের বাজারে চামড়ার দাম কমেছে।
২০১৯ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়ায় বড় ধরনের ধস নেমেছিল। চামড়া বিক্রি করতে না পারায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে চামড়া ফেলে দিয়েছিলো মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, চামড়া সংগ্রহকারী বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিতে হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন রাস্তা থেকে দেড় লক্ষাধিক চামড়া কুড়িয়ে নিয়ে ডাম্পিং করে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি শক্তিশালী খাত চামড়া শিল্পের প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরও অধিক নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
এ মুহূর্তের সংবাদ