কোভিড-১৯ এর প্রথম কয়েক মাস অর্থনীতির যে বিপর্যস্ত অবস্থা ছিল, তা কাটিয়ে ওঠে দেশ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে চলেছে। প্রবাসী আয়ে অবিশ্বাস্য অর্জন, পোশাক খাতে ভালো রপ্তানি আদেশ, কৃষিখাতে সাফল্য অর্থনীতিকে করোনার আগের অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কলকারখানায় উৎপাদনের গতি বেড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে; সাধারণ মানুষ যারা শহরে দিনমজুর, ছোটখাটো ব্যবসা, দোকান করতেন তাদের অধিকাংশ নিজেদের কাজে ফিরে এসেছেন। তবে এ গতি নির্ভর করবে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতির ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড়ো অর্থনীতির দেশগুলিতে উন্নতির গতি ধীর, তারা অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলছেন। বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর আমাদের নির্ভর করতে হবে। ইউরোপে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সুতরাং বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেবে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এতদসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসাÑবাণিজ্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৭০Ñ৮০ শতাংশে এসেছে। তবে চাহিদা আগের পর্যায়ে যায়নি। এ পর্যায়ে প্রধান বাধা কর্মসংস্থান। করোনার সময় অনেকে চাকরি হারিয়েছেন অনেকে গ্রামে চলে গেছেন, অনানুষ্ঠানিক খাতের এখনো পরিষ্কার নয়, প্রবাসী ৩ লাখ মানুষ বেকার। ছোট ও মাঝারি শিল্প ঘুরে না দাঁড়ালে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো সহজ হবে না। প্রণোদনার টাকা উৎপাদনে না গেলে, যদি ভোগ বিলাসে এই টাকা খরচ করা হয় তবে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং তা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।
গ্রামের অর্থনীতিও শক্তিশালী হয়েছে। ফসলের মোটামুটি মূল্য পাচ্ছেন কৃষক। প্রবাসীদের টাকা আসায় গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। গ্রামের অর্থনীতি সক্রিয় থাকলে, কৃষি উৎপাদন ভাল হলে বিশ্ব মন্দা বা দুর্ভিক্ষাবস্থাও সামাল দেয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো জমি অনাবাদী না রেখে ফসল ও সবজি উৎপাদনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির এই পরিস্থিতি নির্ভর করবে আমরা কোভিড পরিস্থিতি কতটা সামাল দিতে পারছি তার ওপর। আগামী শীতে এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা বলা হচ্ছে, এখন থেকেই যথাযথ প্রতিরোধ প্রস্তুতি, চিকিৎসা সেবার সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরিধান করা, সব সময়ের জন্য অপরিহার্য, প্রয়োজন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা। স্বাস্থ্যখাতে যে ঢিলেমি এবং অব্যবস্থাপনা দেখা গিয়েছে তার উন্নতি না হলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। সরকার ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়গুলিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে কর্মপরিকল্পনা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। অধিক জনসমাগম পরিহার করে কেনাকাটা, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে হবে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবরে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে।
মোট কথা, আমাদের অর্থনীতির বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে সব ধরণের প্রস্তুতি থাকা চাই। সেই সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের সহায়তা প্রদান প্রয়োজন। কৃষক সমাজকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, কৃষক ও কৃষি খাতের উন্নতি ও সাফল্য যে কোন বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলার চাবিকাঠি।
মতামত সম্পাদকীয়