চাঁদ মামার বিপদে

অনিক শুভ »

রাতের আকাশে আজ চাঁদ মামা যেন দুধের বাটি হয়ে হাসছে!
মাহী বলল, ‘আহা, চাঁদ মামা আজ বেশ খুশি মনে আছে’!
ঠিক তখনই টিভির খবর ভেসে এলো, “একটা বড় অ্যাস্টেরয়েড ওয়াই আরফোর চাঁদের দিকে ছুটে আসছে!”
রবি চোখ বড় বড় করে বলল,
কী? চাঁদ মামা বিপদে?
লতা বলল,
তাহলে রাতে আলো কে দেবে?
টুকু ফিসফিস করে বলল,
না হলে আমাদের ভূতের গল্পও তো অন্ধকারে আটকে যাবে!
সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠল,
না! আমরা চাঁদ মামার কিছু হতে দেব না!
মাহী, রবি, লতা আর টুকু ঠিক করলো তারা যদি একসাথে হয়, চাঁদকে রক্ষা করা যাবে! তাই তারা বলল চলো ক্লাব বানাই। চাঁদের বন্ধু ক্লাব।
লতা তাত্ক্ষণিকভাবে বই খুলে ফেলল আর বলল, চাঁদ মামাকে বাঁচানোর জন্য বিজ্ঞানীরা দুই ভাবে ভাবছে। একটা হল হালকা ঠেলা দিয়ে অ্যাস্টেরয়েডের রাস্তাটা বদলে দেওয়া। আর অন্যটি হলো বড় ঝুঁকির পরিকল্পনা। যদি মুক্তি না মেলে, তখন সেটাকে ছোট ছোট টুকরো করে ফেলা।
রবি চোখ কপালে তুলে চেঁচাতে শুরু করল, “বোমা? ওরে বাবা, সেটা তো ভয়ানক!”
মাহী কোমলভাবে মাথা কাৎ করে বলল, “হ্যাঁ রবি, তাই বিজ্ঞানীরা খুব ধীরে ধীরে ও অনেক ভেবে কাজ করবে। আমরা শুধু উদ্বিগ্ন না হয়ে, প্রশ্ন করবো আর শিখবো।”
চাঁদের বন্ধু ক্লাব বসে নেই! তারা একটা “মিনি স্পেস ল্যাব” বানিয়ে ফেলল টেবিলের ওপর।
মাহী বলল, “চলো, আমরাও চেষ্টা করি! চাঁদ মামার জন্য এক্সপেরিমেন্ট!”
রবি: “দারূণ! আমি বল আনছি!”
লতা: “আমি পাথরটা রাখছি, এইটা হবে অ্যাস্টেরয়েড।”
টুকু: “তাহলে ধাক্কা মারো!”
বল ধাক্কা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাথরটা আস্তে ঘুরে গেল পাশে। সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠল,
ওরে! এটাতো কাজ করছে!
এই খবর ছড়িয়ে পড়ল স্থানীয় বিজ্ঞান ক্লাবে। বড় বিজ্ঞানী হাসতে হাসতে বললেন,
তোমরা তো একদম ছোট্ট মহাকাশ বিজ্ঞানী! মহাকাশেও আমরা ঠিক এমনভাবেই ঠেলা দিই, শুধু আমাদের বলটা অনেক বড়। আর ধাক্কাটা একটু কম্পিউটারে হিসাব করা!
কিছু দিন পরেই নাসা সত্যিই কাজ শুরু করল! একটা
রোবটিক মহাকাশ যান উড়ে গেল ওই ভয়ংকর অ্যাস্টেরয়েড “ওয়াই আর ফোর” এর দিকে। রোবটটা পৌঁছে খবর পাঠাল, “এটা শক্ত পাথরের মতো! পুরনো, ধুলোয় ঢাকা, কিন্তু সহজে ভাঙবে না।”
বিজ্ঞানীরা মাথা চুলকে বলল,
আহা! তাহলে বোমা দিলে উল্টো বিপদ হবে। চাঁদ মামাই হয়তো ভয় পাবে!
তারা ঠিক করল, “না, আমরা কোমলভাবে ধাক্কা দেব। একটু ঠেলা, ঠিক যেমন বাচ্চারা মার্বেল খেলায় করে।”
বিশাল স্পেসক্রাফট ধীরে ধীরে অ্যাস্টেরয়েডের পাশে গিয়ে “টুপ্!” করে ঠোক্কর দিল। না শব্দ, না আলো। শুধু নিঃশব্দ মহাকাশে ছোট্ট একটা ঠেলা। আর কিছুক্ষণ পরেই খবর এলো,
“অ্যাস্টেরয়েড ঘুরে গেছে! চাঁদ মামা নিরাপদ!”
সাথে সাথে চাঁদের বন্ধু ক্লাবের সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠল! কে যেন চেঁচিয়ে বলল, “ইয়েসস! চাঁদ মামা বেঁচে গেছে!”
মাহী হাত উঁচু করে বলল, “দেখলে? ভয় পেলেই হয় না! জ্ঞান আর কৌতূহলই আসল সুপারপাওয়ার!”
রবি পেট চুলকে হেসে বলল, “চাঁদ মামা যখন নিরাপদ, তাহলে এখন পিঠা পার্টি শুরু হোক! রাতভর খাওয়া আর গল্প!”
আশে পাশের সব বাচ্চারা “পিঠা! পিঠা!” বলে নাচতে লাগল, আর আকাশের ওপরে ঝলমল করতে লাগল সেই সাদা হাসিমুখ চাঁদ।