চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনেক কাজের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্জ্য অপসারণের জন্য যে পরিমাণ যান ও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয় সে পরিমাণ যান–যন্ত্রপাতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নেই। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ৩ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন বর্জ্য প্রতিদিন উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১৫৮৫ টন বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয়। বাকি ১ হাজার ৪৭৮ মেট্রিক টন বর্জ্য অনির্ধারিত স্থানে থেকে যায়, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব বর্জ্য অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা অতি জরুরি। যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো দিয়ে মান সম্মত উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয় না।
অথচ প্রায় চার বছর ধরে ঝুলে আছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ২৯৮ কোটি ৩২ লাখ টাকায় গৃহীত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) একটি প্রকল্প। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় ৩৫৩টি আধুনিক যান–যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে চায় চসিক। প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে গত জানুয়ারি মাসে চসিক থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। এরপর চলতি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির জিওবি অনুদানে সম্মতি দেয়। তবে এতে ঋণের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। যদিও চসিকের ইতিহাসে কোনো প্রকল্পে ঋণ হিসেবে জিওবি অনুদান দেয়ার নজির নেই। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেও আর্থিক সংকটে থাকা চসিকের পক্ষে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটির ডিপিপি প্রেরণ করা হয় ২০২১ সালের আগস্ট মাসে। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৩৯৫ কাটি ৩৮ লাখ টাকা। এরপর একইবছরের ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প যাচাই কমিটি (আইপিইসি) সভায় প্রকল্পের ব্যয় কমাতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের অক্টেবর মাসে ব্যয় কমিয়ে ২৯৮ কোটি ৩২ লাখ টাকায় প্রকল্পের ডিপিপি প্রেরণ করা হয় মন্ত্রণালয়ে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৬ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি’র (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
জানা গেছে, প্রকল্পটির ডিপিপি প্রস্তুত করেন চসিকের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক)। ২০২২ সালের ২৩ মার্চ মাসে তাকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে বদলি করা হয়। এরপর চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা প্রকল্পটি নিয়ে আর আগ্রহ দেখাননি। তারা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রক্ষা না করায় প্রকল্পটি গতি পায়নি।
তবে বর্তমান মেয়র মহোদয়কে ধন্যবাদ তিনি প্রকল্পটির গুরুত্ব অনুধাবন করে এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ায় এবং সর্বশেষ জিওবি অনুদানে ঋণের শর্ত জুড়ে দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রকল্পটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পে অনেকগুলো যান–যন্ত্রপাতি ধরা আছে। এগুলো ছাড়া তো খাল–নালা পরিষ্কার করা সম্ভব হবে না।
আমরা আশা করি সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যাটি গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রায় ৭০ লাখ নগরবাসীর বর্জ্য অপসারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করা হবে।