চট্টগ্রাম দ্বিতীয় রাজধানী নামে কেবল। বাস্তবে এর অবস্থান রাজধানী ঢাকার চেয়ে বহুগুণ নিম্নে তা আর ব্যাপকভাবে বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। শুধু যদি আমরা নাগরিকের মৌলিক অধিকার চিকিৎসার কথা তুলি সেখানে দরিদ্র অবস্থা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিশেষ করে নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলার স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের জন্য একমাত্র ভরসা এই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বর্তমানে মোট শয্যার প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকছে। ফলে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
স্থানীয় একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোলজি ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দার মেঝেতে হচ্ছে স্ট্রোক রোগীর চিকিৎসা। এসব রোগী হাসপাতালের জরুরি মেডিকেল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না। ওয়ার্ডের মূল ফটকের বাইরে ভর্তি দেয়ার কারণে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এছাড়া গভীর রাতে রোগী ও স্বজনদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকবার।
চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সামী এম আদনান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্থান সংকুলানের কারণে আমাদের সেবা দিতে বেগ পেতে হয়, এটি সত্যি। তারপরেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
চমেক হাসপাতাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত চিকিৎসক রয়েছেন। তবে আমাদের ওয়ার্ডে স্থান সংকুলানের অভাবে অনেক রোগীকে বাইরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালের নিউরোলজি ওয়ার্ডে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্ট্রোক রোগী ছাড়াও বিভিন্ন স্নায়ুজনিত রোগীও নিয়মিত ভর্তি হচ্ছে।
জানা যায়, গত ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর থেকে নিউরোলজি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে ওয়ার্ডে বেশিরভাগ রোগী আসতো মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে রেফার হয়ে। স্ট্রোক রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসাটা শুরু হতো মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে। বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ১২০ জন রোগী ভর্তি থাকছে। ওয়ার্ডে অনুমোদিত বেড রয়েছে ৪৫টি। এরমধ্যে বেড বসানো হয়েছে ৮৩টি। বাকি রোগীদের বারান্দার মেঝেতে ভর্তি দিতে হয়।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, ওয়ার্ডে বেড থাকুক, আর না থাকুক, কোনো রোগীকে ভর্তি না দেয়ার সুযোগ নেই। ফলে ওয়ার্ডের ভিতরের বেড ও মেঝে ছাড়িয়ে এখন গেটের বাইরে সিঁড়ির পাশের করিডোরেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রাতের বেলায় নারী চিকিৎসকদের সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ গেটে দায়িত্বরত আনসার থাকে, ওয়ার্ডের ভিতরে নিরাপত্তার জন্য। এছাড়া মেঝেতে রোগী থাকার কারণে নিয়মিত চিকিৎসা রাউন্ডে রোগীদের ফলোআপ করতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বেগ পেতে হয়। এছাড়া গেটের বাইরে রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেনও দেয়া যাচ্ছে না। এটিও একটি বড় সমস্যা।
আমরা বারবার বলে এসেছি, এত বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসাসেবা প্রদান করা আর চমেকের পক্ষে সম্ভব নয়। চট্টগ্রামে আরও সরকারি হাসপাতালের দরকার। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জনগণের ভোগান্তি কমবে না।