২০১৭ সালে চমেক হাসপাতালকে একটি এমআরআই মেশিন বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাপানি হিটাচি ব্র্যান্ডের (১.৫ টেসলা) মেশিনটির মূল্য ছিল সেসময় প্রায় ১০ কোটি টাকা। ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড মেশিনটি সরবরাহ করে। হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের নিচতলায় ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর মেশিনটি স্থাপন শেষে উদ্বোধন করা হয়। তবে মেশিনটির ব্যবহার শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে।
কিন্তু মেশিনটি ৩ বছরের ওয়ারেন্টির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথমবার অচল হয়ে পড়ে। এর কয়েকমাস পর ২০২১ সালের মে মাসে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেরামত করে দেয় মেশিনটি। তবে মাস না যেতেই আবার অকেজো হয়ে পড়ে এমআরআই মেশিন। সে থেকে এখন পর্যন্ত অচল হয়ে পড়ে আছে দামি এই মেশিন।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় ৪ কোটি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। দীর্ঘ সময় হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই মেশিনটি নষ্ট থাকার কারণে গরিব রোগীরা কম খরচের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মেশিনটি মেরামতে এই সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি), ন্যাশনাল ইলেকট্রো–মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিইউ অ্যান্ড টিসি) এবং মেশিনটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডকে ৩০ বার চিঠি লেখা হয়েছে। গত দু্ই বছর ধরে কেবল চিঠির পর চিঠি দেওয়া হলেও মেশিনটি সচল করা যায়নি। হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই মেশিনটি দীর্ঘ সময় ধরে নষ্ট হয়ে থাকায় দরিদ্র রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক রোগী বাধ্য হয়ে বেসরকারি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এমআরআই পরীক্ষা করছেন। চমেক হাসপাতালে তিন/চার হাজার টাকায় টেস্ট করা গেলেও প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খরচ পড়ছে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এমআরআই মেশিনটি ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হয়ে যায় গত ২০২১ সালের জুনে। এরপর থেকে মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি (সিএমসি) নিয়ে সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের সাথে টাকার অংক নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়। তবে সম্প্রতি নিমিইউ অ্যান্ড টিসি’তে একটি বৈঠকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এমআরআই মেশিনটির মেরামত এবং ৩ বছরের সিএমসির জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রস্তাব দাখিল করে। বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
এত টাকা দামের একটি মেশিন কেনার সময়ে কর্তৃপক্ষ গ্যারান্টি ও ওয়ারেন্টির বিষয় কেন চূড়ান্ত করেননি তা বোধগম্য নয়। চুক্তিপত্রে কি স্পষ্ট করে বিক্রোয়োত্তর সেবা ও শর্তের লেখা ছিল না? একটি টেলিভিশন বা একটি ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রেও তো বিক্রোয়োত্তর সেবার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে আর দশ কোটি টাকা দামের একটি মেশিনে কেন থাকবে না?
এ মেশিন সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মেশিনটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বা যারা জড়িত ছিলেন তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার।
এ মুহূর্তের সংবাদ