নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস ফি বাড়ার প্রতিবাদে গতকাল ফের বিক্ষোভে নামেন রোগীর স্বজনেরা। এ সময় আচমকা এই বিক্ষোভে পুলিশ বাধা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভরত এক মহিলাকে ‘যা বলার আমাকে বলো, তোমার ভিডিও করবো, তোমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করবো আমি’ বলে চিৎকার করে ওঠেন দায়িত্বরত ওসি। পরে ভিডিও করা মোবাইল সরাতে গিয়ে পুলিশ এবং রোগীর স্বজনদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চমেকের মূলফটকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হলে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী জান্নাত সিকদার। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। তখন এক পুলিশ সদস্য এসে রাঙামাটি থেকে আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে পুলিশ আনা হচ্ছে উল্লেখ করে আমাদেরকে রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেন। তখন আমরা বললাম, আমরা রাস্তা ছাড়বো না। তবে পুলিশের ওই অ্যাম্বুলেন্সটি এলে আমরা নিজ দায়িত্বে হাসপাতালে গেট অবধি পৌঁছে দেব। তারপর ওসি এসে আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে, মহিলা-পুরুষ সকলকে ধাক্কা দিতে থাকেন। সেখানে আমরা তিন-চারজন মহিলা ছিলাম। আমাদেরও ধাক্কা দিচ্ছিলেন। তখন আমি ওসির সাথে কথা বলছিলাম। ওসি আমাকে বলছিলেন, তুমি সামনে আসো, মাস্ক খোলো। তুমি আমার সাথে কথা বলো, তোমার ভিডিও করবো, তোমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করবো আমি’।
পরে সরে দাঁড়িয়ে আমি এবং মোস্তাফিজ ভাইয়া মিডিয়াকে বলছিলাম। মহিলাদের কেন ভিডিও করা হবে, কেন গায়ে হাত তোলা হবে? এমন সময় ওই ওসি আবার এসে আমাকে বলেন, তুমি যা বলার আমাকে বলো, আমি ভিডিও করবো। তখন আমি বলি, মেয়েদের ওপর হাত তুলবেন কেন, ভিডিও করবেন কোন আইনে? তারপর মোস্তাফিজ ভাইয়া ওসির মোবাইল সরাতে গিয়ে গায়ে লেগে যায়। পরে হাতাহাতি হয়। তারপর ওই ভাইয়াকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এখনও ছেড়ে দেননি।’
জানা গেছে, আটকৃতের নাম মো. সাইদ মোস্তাফিজ। তার মা চমেকের কিডনি রোগী।
সুজন নামে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী আরেকজন বলেন, আজকের (গতকাল) বিক্ষোভে রোগীর স্বজনদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। এ সময় অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কয়েকজনকে। আমরা মরে যাচ্ছি, আামদের রোগীদের বাঁচিয়ে রাখতে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে আমাদের ওপর হামলা কেন, আমরা নিন্দা জানাই। তবে আমরা কোনো অরাজকতা চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের রোগীদের জন্য লড়তে চাই। আমাদের ঘরের কিডনি রোগীকে চিকিৎসা করার মতো অর্থ আমাদের নেই। আমরা পারছি না চিকিৎসা করাতে। আমরা আগের টাকায় রোগীদের ট্রিটমেন্ট করাতে চাই।
তিনি আরও বলেন, বলা হচ্ছে আগামী তিনদিন আরও ৫৩৫ টাকায় চিকিৎসা করানো হবে। এরপর আবার বাড়ানো হবে।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক ওসি(তদন্ত) সাদেকুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মূলফটক একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এখানে রোগীরা আসেন, চকবাজার-২ নাম্বার গেটে আসা-যাওয়া করেন অনেক লোক। সেখানে এমন জটলা সরানো আামাদের দায়িত্ব। তারা আমাদের ওসির সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। তার মোবাইল ভেঙে ফেলে দেন। ঘটনাস্থল থেকে আমরা একজনকে আটক করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তা পরে জানানো হবে।
এদিকে স্যান্ডরে ডায়ালাইসিস করতে আসা রোগীদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, আমরা স্যান্ডরের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছি। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াচ্ছি। করোনা ওর্য়াডে থাকা মেশিন সচল করা হবে। আজ (গতকাল) থেকে কিডনি ওয়ার্ডে ২৫ জনকে ডায়ালাইসিস করানো হবে। ঢাকা থেকে শীঘ্রই মেশিন যোগ হচ্ছে। আগামী ২০-২৫ দিন পর আমরা অনেক রোগীর ডায়ালাইসিস করাতে পারবো।
এ প্রসঙ্গে আরও কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ডা. নুরুল হুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, এখনো আমাদের মেশিন চারটাই সচল আছে। কাল হয়তো করোনা ওয়ার্ডে থাকা মেশিনগুলো সচল করার চেষ্টা চলবে। একদিনে ২৫ রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করবো।