চবি শিক্ষার্থী মামুনের খুলে রাখা মাথার খুলির সফল প্রতিস্থাপন

সুপ্রভাত ডেস্ক »

গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী মামুন মিয়া (২৪)। মাথায় মারাত্মক আঘাতের কারণে তার মাথার খুলি খুলে রেখে দেওয়া হয়েছিল দুই মাস আগে। চিকিৎসকরা খুলি আলাদা করে তাকে চিকিৎসা দিতে থাকেন। দীর্ঘদিন মাথা থেকে আলাদা ছিল খুলিটি। শনিবার (১ নভেম্বর) অপারেশনের মাধ্যমে এটি প্রতিস্থাপন করা হয়। অপারেশন সফল হওয়ায় বর্তমানে সুস্থ আছেন চবির এই শিক্ষার্থী। এতে খুশি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মানুষের স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা।

একইসঙ্গে চবির আন্তর্জাতিক বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমও (২৪) সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। দুইজনই চিকিৎসাধীন রয়েছেন চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতে মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন মামুন। গুরুতর আহত হন সায়েমও।

পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এটিএম রেজাউল করিম জানান, মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দুই শিক্ষার্থীকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমত, চিকিৎসকদের আন্তরিকতা এবং হাসপাতালের সর্বোচ্চ সেবায় তারা দুইজনই এখন সুস্থ। মামুনের মাথায় খুলি আমরা প্রতিস্থাপন করেছি। এরপর মামুন স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন। এই দুইজনের চিকিৎসাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। চিকিৎসকরা তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট শনিবার রাতে এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চবির অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হন। গ্রামবাসীর মধ্যেও অনেকে আহত হন। আহত শিক্ষার্থীদের চবির ৮টি বাস ও ৯টা অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ নগরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় চবি ক্যাম্পাস থেকে। এর মধ্যে মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন মামুন মিয়া এবং ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। প্রথমে তাদেরকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। দ্রুত অস্ত্রোপচারের জন্য পরে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন রাতেই তাদের অস্ত্রোপচার হয়। এর মধ্যে অপারেশনের মাধ্যমে মামুন মিয়ার মাথার খুলি পৃথক করে রেখে দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে মামুন ও সায়েম পার্কভিউ হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন।

এই বিষয়ে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মু. ইসমাঈল হোসেন জানান, অপারেশনের দুই মাস পর মামুনের মাথার খুলি প্রতিস্থাপন করা হল। এখন মামুন সুস্থ। আর হামলায় সায়েমের একটি পা অবশ হয়ে যাওয়ায় তাকে থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সায়েমও সুস্থ। আরও কিছু দিন তাকে থেরাপি দিতে হবে। দুইজনই এখন স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন। হামলার সময় ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মামুনের মাথার পেছনে ব্রেইনের অংশে মারাত্মকভাবে আঘাত করা হয়। অপারেশনের মাধ্যমে তার মাথা থেকে ১৩ টুকরো হাড় বের করা হয়েছিল বলেও জানান এই চিকিৎসক।

তথ্যমতে, মাথার খুলি রেখে দেওয়ার ঘটনা এটি প্রথম নয়। এর আগে ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি আকিব মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। দুইদিন পর তার মাথায় অপারেশন করা হয়। তখনও মাথার খুলি রেখে দিয়ে ধবধবে সাদা ব্যান্ডেজের ওপর লিখে দেওয়া হয়েছিল ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না।’ এই লেখা নিয়ে দেশে তখন ব্যাপক আলোচনা হয়। পরে আকিবের মাথার খুলিও প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল চমেক হাসপাতালে।

মামুনের ভাই মাসুদ রানা জানান, মামুনের সুস্থতার জন্য আমরা সবার কাছে ঋণী।