সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনদিন পেরিয়ে গেলেও মামলা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা পর্যন্ত হাটহাজারী থানায় সংঘর্ষের কোনো মামলা রেকর্ড হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলার রেকর্ডের জন্য সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ একটি এজাহার জমা দেয়। তবে এতে বাদী হিসেবে সুনির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি৷ এজাহারে আবেদনকারী হিসেবে তারা প্রক্টরিয়াল বডির নাম উল্লেখ করেন।
থানা থেকে জানানো হয়েছে, সুনির্দিষ্ট কেউ বাদী না হলে মামলা রেকর্ড সম্ভব না৷ এ কারণে এজাহার সংশোধন করতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে আর এজাহার জমা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট কাউকে বাদী হতে। কিন্তু আর এজাহার জমা দেয়নি। এজাহার সংশোধন করে বাদী হিসেবে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করলে মামলা রেকর্ড হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রহিম বলেন, সোমবার আমরা হাটহাজারী থানায় মামলার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। তবে এখানো মামলা করা হয়নি। আজকে (মঙ্গলবার) অভিযুক্তদের তথ্য প্রমাণ ও আহতদের মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহ করে মামলা করা হবে।
জানা গেছে, গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে গতকাল বেলা ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
চবি মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র অফিসার ডা. ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, গত শনিবার থেকে প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৫০০ শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর গুরুতর আহত হয়েছেন ১০ জন।
তিনি বলেন, আহতদের অধিকাংশের শরীর ছিলে গেছে, কেটে গেছে এবং তাদের শরীরে গভীর ক্ষতও ছিল। স্ক্রিনের নিচে ব্লাড জমে কালো হয়ে গেছে এ ধরনের শিক্ষার্থীও ছিল। শিক্ষার্থীদের কপাল, মাথা, শরীরে ক্ষত ছিল।
জানা যায়, গত রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ শিক্ষকরা দুপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুপক্ষ।
দুপক্ষের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল রড, পাইপ, কাঠের লাঠি ও পাথর। স্থানীয়দের হাতে ছিল রামদা, রড ও পাইপ। সংঘর্ষে ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে সংঘর্ষ গ্রামের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী অলিগলিতে আটকে গেলে তাদের মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে। একপর্যায়ে গতকাল বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। পরে আজ মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত এই সময় বাড়ানো হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দুই শিক্ষার্থী বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। একজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।