চবি প্রতিনিধি »
সাংবাদিক হেনস্থা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া, আবাসিক হল ভাঙচুর, মারামারি ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের ১৭ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি এক শিক্ষার্থীকে নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।
গতকাল বুধবার বহিষ্কার আদেশ প্রকাশ করা হয়। সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির অনলাইন সভায় যাচাই বাছাই শেষে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মীরা
গত বছরের ১১ আগস্ট খালেদা জিয়া হলে ছাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতি এবং মারধরের ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের উপ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তাসফিয়া জাসারাত নোলককে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিক ও কালবেলার প্রতিনিধি রেদোয়ান আহমেদকে শারীরিক ও মানসিক হেনস্থার ঘটনায় লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরশিল আজিম নিলয় ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শোয়েব মোহাম্মদ আতিক কে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত বছরের ৮ অক্টোবর আলাওল হলের প্রভোস্ট কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক হাসান মাহমুদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই ঘটনায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম কে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
২ ডিসেম্বর এ এফ রহমান হলে দেশীয় অস্ত্রসহ কয়েক দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া, রুম ভাঙচুর এবং কর্মরত সাংবাদিকদের হুমকির ঘটনায় ছয়জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হলেন, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তনয় কান্তি সরকার, একই শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের লাবিব সাঈদ ফাইয়াজ, ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিফাতুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. মোবারক হোসেন ও একই সেশনের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের নাহিদুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া ৫ ও ৬ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চবি ছাত্রলীগের দুইটি গ্রুপ সিক্সটি নাইন ও ভিএক্সের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে দোকানপাট ভাঙচুর, ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনায় মোট ৬ ছাত্রলীগ কর্মীকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন, ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল হক চৌধুরী, বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাহমুদুল হাসান ইলিয়াস, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ ফাহিম, ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সদস্য মো. ইকরামুল হক, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের নয়ন দেব নাথ।
পাশাপাশি শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্টের দায়ে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. জোবায়ের হোসেনকে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতির সাথে জড়িত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চবি প্রক্টর প্রক্টর ও বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব রবিউল হাসান ভূঁইয়া জানান, সংঘর্ষ ও মারধরের প্রতিটি ঘটনা যাচাই করে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জড়িত অনেকে ক্ষমা চেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপে জড়াবেন না মর্মে কথা দিয়েছেন। তাই কয়েকজনকে সতর্ক করে ক্ষমা করা হয়েছে।