নিজস্ব প্রতিনিধি, চন্দনাইশ ও মিরসরাই <<
চন্দনাইশের বরকল ইউনিয়নে উত্তর বরকল গাজী বাড়ি এলাকায় ১৭টি বাড়ি অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে। এতে ৬ পরিবারের নগদ অর্থ, আসবাবপত্র, বাড়ির তৈজসপত্র, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে গাজী বাড়ি এলাকায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন- মুজিবুর রহমান, লবিস খাতুন, মোহাম্মদ শহীদ, মোহাম্মদ মনসুর, কুনছুম আকতার, আবু বক্কর।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে বাড়ির লোকজন ঘুমাচ্ছিল। রাত ১টার দিকে হঠাৎ বাড়িতে আগুন দেখে ঘুম ভাঙে। এ সময় স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় দু’ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানাতে পারেনি কেউ।
চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহ আলম খাঁন জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তবে তিনিও অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তদন্তের পর এ সম্পর্কে জানা যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ, চাল, টিন, ও কম্বল বিতরণ করেন।
এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আবদুল কৈয়ুম চৌধুরীর পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিতরণ করা হয়।
চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমতিয়াজ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে নগদ টাকা, টিন ও কম্বল বিতরণ করেন বলে জানান।
মিরসরাই
মিরসরাইয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৬ পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার পূর্ব মায়ানী গ্রামের অর্জুন শীলের বাড়িতে এক সাথে ৬টি ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্তদের ধারণা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কেউ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের পূর্ব মায়ানী গ্রামের অর্জুন শীল বাড়িতে রাত পৌনে ২টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিবারের লোকজনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অর্জুন শীল, সহদেব শীল, বাসুদেব শীল, হারাধন শীল, মহাদেব শীল ও রঞ্জিত শীলের বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, তাদের বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই। কিভাবে আগুন লেগেছে তারা জানে না। মুহূর্তের মধ্যে একই সাথে ৬টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সব কিছু হারিয়ে এখন আমরা খোলা আকাশের নিচে। পূর্ব শত্রুতার জেরে কেউ এই কাজ করতে পারে।
এদিকে ঘটনার পর রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে ট্রাস্টি উত্তম শর্মা, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও শারদাঞ্জলি ফোরামের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় তারা অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী বলেন, আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে বাড়ির টিনের চালে বেশ কয়েকটি ঢিল ছোঁড়া হয় বলে জানায় ক্ষতিগ্রস্তরা। এরপর পরিবারের লোকজন ঘর থেকে বের হলে হঠাৎ সবকটি ঘরে একযোগে আগুন লাগে। আমরা ধারণা করছি দুটি মুসলিম পরিবারের সাথে এসব হিন্দু পরিবারের জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এটি থেকেও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
মিরসরাই থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, এটি সাম্প্রদায়িক কোনো নাশকতা নয়। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।