চড়ুই ছানা ও দুই বন্ধু

অলোক আচার্য »

কাল তুই পাখির ছানা দুটোকে ঠিক দেখেছিস তো? জয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে তামিম।
জয় মাথা কাত করে জবাব দেয়, হ ঠিক দেখছি। ছানা দুটো মা’র কোলের ভিতর চ্যাঁও চ্যাঁও করছিল।
তাহলে তো ঠিকই আছে। আজ ওরা কোথায় গেলো? অন্য কোনো বাসায় চলে গেলো না তো!
আরে না! ওই ছোট্ট দু’টো বাচ্চা নিয়ে মা পাখিটা কোথায় যাবে? তামিম ভরসা দেয়।
মাত্র দু’দিনেই চড়ুয়ের ছানা দুটোর ওপর কেমন মায়া পরে গেছে। প্রতিদিন একবার না দেখলে মনটা যেন কেমন করে। আরও ওরা দেখ, আমাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। একটুও ভয় পায় না।
আসলে ঘটনা হলো চার পাঁচ দিন আগে রাতে বেশ জোরে ঝড় হয়। আশেপাশে অনেক গাছ-টাছ পড়ে যায়। পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে ওরা এদিক সেদিক দেখছিল কোথাও ঝড়ে আম পরে আছে কি না। হঠাৎ ওদের চোখ যায় চড়ুয়ের বাচ্চা দুটোর দিকে। একটা মাঝারি সাইজের গাছের নিচে পরে চ্যাঁও চ্যাঁও করছিল। এই প্রাণ নিয়েই কোনোমতে বেঁচে ছিল তখনো। আর একটু দূরেই ওদের মা পাখিটা সারাক্ষণ ডাকাডাকি করছিল। ওরা প্রথমটায় ভেবে পায় না কী করবে। পাখির ছানা দুটোকে ধরে বাড়ি নিয়ে যাবে?
তারপর আবার ভাবলো এই ছোট্ট বাচ্চা বাড়ি নিয়ে কী হবে! এদের তো বাঁচানো যাবে না। তার চেয়ে বাসাটা খুঁজে বের করা দরকার। অবশ্য ঝড়ে যদি সেটা থাকে! কিছুক্ষণ গাছটার ওপরে এদিক সেদিক দেখার পর একটা নিচু মতোন ডালে বাসাটাকে খুঁজে পেলো। সেটা তখনও ডালেই অক্ষত ছিল। জয় পাখির বাচ্চা দুটোকে নিয়ে গাছে উঠে বাসায় রেখে এলো। এতক্ষনে মা পাখিটা বাসায় ঢুকে গেলো। তারপর থেকে কী যে হলো দুই বন্ধুর। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে পাখির ছানা দুটোকে একবার অন্তত দেখা চাই। আর পাখিগুলোও যেন ওদের অপেক্ষাতেই থাকে।
দুই দিন পরের কথা। একদিন বিকেল থেকেই প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়। দেখতে দেখতে বৃষ্টি সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতেও চলে সমান তালে। ওদের পাখির বাচ্চা দুটোর কথা মনে ছিল না। পরের দিন স্কুলে যাওয়ার পথে মনে হলো। গাছটার দিকে এগিয়ে যেতেই ওরা তো হতভম্ব! পাখির ছানা দু’টো পরে আছে। হাতে তুলে দেখে মরে গেছে অনেক আগেই। ওরা বুঝলো ঝড় সামলে নিলেও বৃষ্টির দাপট সহ্য করতে পারেনি। মা পাখিটাকেও আশেপাশে কোথাও দেখতে পায় না। তারপর সেই গাছটার নিচেই কাঁদতে কাঁদতে পাখির বাচ্চা দুটোকে গর্ত করে শুইয়ে দেয়।