ভূঁইয়া নজরুল »
এবারের সীমিত পরিসরের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে। গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠার পর এবারই কি পাশের হার সর্বোচ্চ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে স্বয়ং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকও সংশয়ে পড়েন। পরবর্তীতে বোর্ডের উপাত্ত খুঁজে ২০১৪ সালে ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ পাশের হারের তথ্য পাওয়া যায়। বোর্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পাশ সেবছরই করেছিল। তবে ২০০১ সালে জিপিএ-৫ পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এবছরই সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ (১২,৭৯১ জন) পেয়েছে। এর আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল ২০১৪ সালে (১০,৮৮৪ জন)।
১৯৯৬ থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পাশের হার ২০১৪ সালে ৯১.৪০%
♦
এবার পাশের হার ৯১.১২%, জিপিএ-৫ ১২,৭৯১
করোনাকালে এবার সারাদেশে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাত্র তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেন, ‘তিনটি বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বরের সাথে জেএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ম্যাপিং করে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছে। যেহেতু মাত্র তিনটি বিষয় ছিল, তাই এই তিন বিষয়ে যারা পাশ করেছে বাস্তবিক অর্থে তারাই এবার পাশ করেছে।’
তিনি আরো বলেন, একারণে পাশের হার এবং জিপিএ-৫ বেশি হয়েছে। এছাড়া সরকারের অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম এবং অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমও প্রভাব ফেলেছে ফলাফলে।
অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমটি মনিটরিং করা হয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে। এবিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার চর্চার মধ্যে ছিল। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও পড়ালেখায় ঘাটতি হয়নি।’
করোনা মহামারির কারণে পড়ালেখায় তেমন ঘাটতি হয়নি উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ। এবিষয়ে নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম বলেন, ‘করোনাকালে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করেছেন। এই অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কিন্তু একটি অধ্যায় সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকতে হয়েছে। ফলে পরীক্ষায় গিয়ে সুবিধা পেয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা।’
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া স্বরস্তিকা বড়–য়া নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, করোনাকালে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম ও অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি তাদেরকে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হয়েছে। যেসব অধ্যায়ের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা হয়েছে সেসব অধ্যায় থেকেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
পাশের হার ৯৬ থেকে ২০২১
১৯৯৬ সালে শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষা শুরু হওয়ার বছরে পাশের হার ছিল ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ, পরবর্তীতে ৯৭ সালে ৬১ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ৯৮ সালে ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, ৯৯ সালে ৫৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ২০০০ সালে ৩৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, ২০০১ সালে ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ২০০২ সালে ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০০৩ সালে ৩৫ দশমিক ১২ শতাংশ, ২০০৪ সালে ৪৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ২০০৫ সালে ৬০ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০০৬ সালে ৬৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ২০০৭ সালে ৫৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ২০০৮ সালে ৭২ দশমিক ৬২ শতাংশ, ২০০৯ সালে ৬৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, ২০১০ সালে পাশের হার ছিল ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশ, ২০১১ সালে ৭৮ দশমিক ২৭ শতাংশ ও সর্বশেষ ২০১২ সালে পাশের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৮৮ শূন্য দশমিক চার, ২০১৪ সালে ৯১ দশমিক ৪, ২০১৫ সালে ৮২ দশমিক ৭৭, ২০১৬ সালে ৯০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ, ২০২০ সালে ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২০২১ সালে ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ।
জিপিএ পদ্ধতি শুরু হয় ২০০১ সাল থেকে
অপরদিকে ২০০১ সাল থেকে জিপিএ পদ্ধতি চালু হওয়ার পর প্রথমবছরে চট্টগ্রামে কেউ জিপিএ-৫ পায়নি। পরবর্তী বছর ২০০২ সালে ৬৮ জন, ২০০৩ সালে ৩০ জন, ২০০৪ সালে ১ হাজার ২০৯ জন, ২০০৫ সালে ২ হাজার ২৬৫ জন, ২০০৬ সালে ৩ হাজার ৭২৫ জন, ২০০৭ সালে ৩ হাজার ৩১৩ জন, ২০০৮ সালে ৪ হাজার ৩১৬ জন, ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৫২৯ জন, ২০১০ সালে ৫,৮০০ জন, ২০১১ সালে ৪ হাজার ৮১৯ জন, ২০১২ সালে ৫ হাজার ১২১ জন, ২০১৩ সালে ৭ হাজার ৩৫৮ জন, ২০১৪ সালে ১০ হাজার ৮৮৪ জন, ২০১৫ সালে ৭ হাজার ১১৬ জন। ২০১৬ সালে ৮ হাজার ৫০২ জন, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৩৪৪ জন, ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৯৪ জন, ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৩৯৩ জন, ২০২০ সালে ৯ হাজার ৮ জন ও ২০২১ সালে ১২ হাজার ৭৯১ জন।
এবছরের ফলাফল
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ১০৭৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬৩৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে পাশ করেছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫০ জন। পাশের হার ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৭৯১ জন। বিজ্ঞানে পাশের হার ৯৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ২৯১ জন। মানবিকে পাশের হার ৮৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৬ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাশের হার ৯২ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩৪৪ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় পাশের হার ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ, শুধু মহানগরে পাশের হার ৯৫ দশমিক ২৭ শতাংশ, রাঙামাটিতে পাশের হার ৮৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, কক্সবাজারে ৯০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৮৪ দশমিক ১৯ শতাংশ ও বান্দরবানে ৯০ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
জিপিএ-৫ ও পাশের হারে সেরা ডা. খাস্তগীর
এবছরের প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ ও পাশের হারে সবার সেরা ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের ৪৭৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাশ করেছে এবং ৪৫৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এছাড়া কলেজিয়েট স্কুলের ৪৬২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সকলে পাশ করেছে কিন্তু জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৪৬ জন। নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৪৬৯ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯১ জন। সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪০৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাশ করেছে কিন্তু জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬৩ জন। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ৪৫৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাশ করেছে কিন্তু জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২১ জন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনী স্কুল এন্ড কলেজের ৪৮৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮১ জন পাশ করেছে এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮৬ জন।