একনেকে প্রকল্প অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকার তুলনায় স্বাস্থ্যখাতে বরাবরই পিছিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম। ফলে প্রতিদিন বাড়তি রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালকে। তবে এবার চমেক হাসপাতালের বিকল্প হয়ে আসছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (চমেবি)। এতে ১২’শ শয্যার হাসপাতালসহ নানা অবকাঠামো উন্নয়নে ১ হাজার ৮৫১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুধু স্বাস্থ্যসেবায় নয়, শিক্ষা ও গবেষণায় চট্টগ্রাম এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে প্রকল্পটির অনুমোদন হয়।
জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় ১৫তলা হাসপাতাল ভবন ১টি, প্রশাসনিক ভবন ১টি, একাডেমিক ভবন এবং ডিনস অফিস ১টি, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ক্যাফটেরিয়া, টিএসসি, প্রার্থনাকক্ষ, কনভেনশন হল এবং টিচার্স ক্লাব/ লাউঞ্জ ১টি, বিআইটিআইডি হাসপাতাল ভবনের ৫তলা হতে ১০ তলা ঊর্ধ্বমুখী ৬টি ফ্লোর সম্প্রসারণ ১টি। একই সাথে দ্বিতল ভিসি বাংলো ১টি, ১৫তলা প্রোভিসি, ট্রেজারার, ডক্টরস এবং অফিসার্স কোয়ার্টার ১টি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছাত্রদের হোস্টেল ও ছাত্রী হোস্টেল, আইএইচটি শিক্ষার্থী ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পৃথক হোস্টেল ও নার্সেস ডরমিটরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ১২’শ শয্যার ১৫তলা হাসপাতাল হবে। এতে চিকিৎসকদের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েটসহ কোর্স চালুর জন্য ১০ ফ্যাকাল্টিসহ ৬৯টি চিকিৎসা বিভাগ থাকবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চমেবি) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় চট্টগ্রাম স্বাস্থ্যসেবায় আরও একধাপ এগোতে যাচ্ছে। এটি এ এলাকায় স্বাস্থ্য সেবাদানের পাশাপাশি শিক্ষাবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
চমেবি’র মুখপাত্র ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা এতদিন স্বল্প পরিসরে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছিলাম। এ প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া একটি প্রকল্প একনেক সভায় পাস হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য টাকা ছাড় হবে। চার বছর অর্থাৎ ২০২৭ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে।’
এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে গবেষণাকর্মেও উন্নতি হবে বলে মন্তব্য করেন জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে এ বিশেষায়িত হাসপাতালটি করতে প্রথম থেকেই আমরা আন্দোলন করে আসছি। অবশেষে সেই দাবিপূরণ হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের খবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশে ১৩টি বিশেষায়িত হাসপাতাল আছে, যার মধ্যে ১২টিই ঢাকায় অবস্থিত। দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যনগরী হওয়া সত্ত্বেও মাত্র একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল চট্টগ্রামে। ফলে সবকিছুর জন্য ঢাকায় ছুটতে হয়। এখন সেই প্রবণতা কমে আসবে। আমরা চাই প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।’
চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আশীষ দে বলেন, ‘এটি বাস্তবায়ন হলে সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, ফেনী এবং কুমিল্লার রোগীরা সেখানেই ভর্তি হবে। চাপ কমবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে। এছাড়া গবেষণারও সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগীয় প্রধান ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসূফ বলেন, ‘নানারকম রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। দরকার পড়ে গবেষণার। এতদিন বেশিরভাগই ঢাকানির্ভর হয়ে আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকানির্ভরতা কমাবে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটাবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।’
সীতাকুণ্ডে ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সংলগ্ন ২৩ দশমিক ৯২ একর জমি হাসপাতালসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বরাদ্দ আছে। ২০১৭ সালের ১৭ মে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডাক্তার মো. ইসমাইল খানের যোগদানের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস এবং বিএসসি অনার্স ইন নার্সিং ও বিইউএমএস (ব্যাচেলর অব ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি) কোর্সের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হয়। এসব শিক্ষার্থীরা আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হত।