সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল নির্মাণ। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বিস্তীর্ণ ভূমি এবং জেগে ওঠা চরে নির্মিত হবে এই বে-টার্মিনাল এবং সংলগ্ন প্রয়োজনীয় স্থাপনা। ইপিজেড থেকে দক্ষিণ কাট্টলি রাসমণিঘাট পর্যন্ত সাগরের ভেতরের দুই হাজার একরেরও বেশি ভূমি নিয়ে এই টার্মিনাল নির্মাণ করার কথা রয়েছে। সন্নিহিত এলাকায় ইয়ার্ডসহ অন্যান্য আরো স্থাপনা নির্মাণে ৮৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এই বে-টার্মিনাল হবে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণ এবং এটি নির্মিত হলে প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলির চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগও সৃষ্টি হবে, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর আরো বহুদূর এগিয়ে যাবে।
জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিপুল গতিবেগ আসবে। আমাদের পত্রিকায় বে-টার্মিনাল নিয়ে করা বিশেষ প্রতিবেদনগুলিতে সাক্ষাৎকারে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও স্টেক হোল্ডাররা অর্থনীতি আর ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থেই দ্রুত বে-টার্মিনাল নির্মাণ, আঞ্চলিক বাণিজ্যে এর গুরুত্ব, বে-টার্মিনালে বাফার বন্ডেড ওয়্যার হাউজ নির্মাণ, সড়ক, রেল যোগাযোগসহ হিন্টারল্যান্ড সুবিধা, প্রতিবেশী দেশগুলির চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ-এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে বলেছেন। আবার এই প্রকল্পের শ্লথ অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষও আছে তাদের মধ্যে।
জাতীয় অগ্রাধিকার প্রাপ্ত এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প নির্মাণের কথা গত কয়েক বছর আলোচিত হলেও প্রকল্প নির্মাণের কাজে অগ্রগতি খুবই মন্থর। আমাদের পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজনীয় মাস্টারপ্ল্যান পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা বা স্টাডি রিপোর্ট এখনো প্রণয়ন করা হয়নি। বৃহৎ অংশের জমি অধিগ্রহণে জটিলতাও আছে। বিগত কয়েক বছরেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার নিরসন হয়নি। প্রকল্পের অনুমোদনে সিডিএ বেশ কালক্ষেপণ করেছে। প্রকল্পের সমীক্ষা ও জমি অধিগ্রহণ এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রকার আমলাতান্ত্রিক জট পরিহার করে অতি দ্রুত এসব কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এই বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন হবে। তিনি ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ব্যবসাকেন্দ্রিক গাড়ি চলাচলের জন্য এক্সপ্রেস লাইন প্রয়োজন বলে আমাদের প্রতিনিধির কাছে সাক্ষাৎকারে বলেছেন।
বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে যে কোনো দৈর্ঘ্যরে ১২মিটার ড্রাফটের জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে এবং পণ্য খালাস এবং অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবাণিজ্য অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরসহ এই বে-টার্মিনালের বিস্তৃত যোগাযোগের পশ্চাদভূমি থাকছে। মিরেরসরাই থেকে বে-টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বন্দর, কর্ণফুলী টানেল হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ যোগাযোগ বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে। সেই সাথে এশিয়ার বৃহত্তম মিরসরাই এলাকার বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে দেশি বিদেশি বিনোয়োগে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে এই শিল্পকেন্দ্রের সংযোগ ঘটবে।
আমরা তাই মনে করি বিনিয়োগ ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলি দ্রুত উদ্যোগ নেবে। বিশ্ব বাণিজ্যে সক্ষমতা বাড়ানো এবং আমাদের অর্থনীতি ও জাতীয় প্রবৃদ্ধির অগ্রগতির স্বার্থে এই মেগাপ্রকল্প নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়