চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : একটি তুচ্ছ ঘটনায় এত বড় সংঘর্ষ কেন

ঘটনাটি ছিল খুব তুচ্ছ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেইট সংলগ্ন একটি ভবনের ভাড়াটিয়া এক ছাত্রীর সঙ্গে ভবনের নিরাপত্তারক্ষীর বিতণ্ড হয়। এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তেমন হলো না। এর জেরে শনিবার মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোবরা গ্রামবাসীর সংঘর্ষের লেগে যায়। রাতে শুরু হওয়া ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষ পরদিন রোববারও চলে দফায় দফায়।
তাতে শিক্ষার্থী, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, উপউপাচার্যসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সংঘাতের মধ্যে রোববার দুপুর ২টা থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস ও আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সোমবার দ্বিতীয় দিনের মত বন্ধ থাকে ক্লাস-পরীক্ষা।

গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’ বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম। সে সূত্রে জানা গেছে, দুজনকে বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন।
আরেক এক শিক্ষার্থীর রক্তনালী ছিঁড়ে যাওয়ার তাকে চট্টগ্রামে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা এনআইসিবিডিতে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার) পাঠানো হয়েছে।

গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা এবং শান্তি শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পূর্বে জারীকৃত এলাকায় বিরাজমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে আগামী মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।
এ সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সকল প্রকার সভা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশীয় অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এ ঘটনা কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রথমত; এত তুচ্ছ ঘটনায় এত বড় সংঘর্ষ হল কীভাবে? কেউ বা কোনো অপশক্তি কি ঘটনা ঘটিয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়ার পরে দেরিতে সাড়া দেওয়ার অর্থ কী? গ্রামবাসী কি পূর্ব থাকা কেই শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ছিল? থাকলে সেটি কোন কারণে? আর আমরা এত বেশি উগ্র হয়ে উঠলাম কেন? কেন আজ কথা বলার আগে ঝগড়া করছি। ঝগড়ার শুরুতে মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছি। এ কারণগুলো খতিয়ে দেখা দরকার।
এখানে বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে। সেটি কোথাও স্থানান্তর করা যাবে না। কাজেই গ্রামবাসীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান জরুরি। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রামের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে একটি শান্তি কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।