চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে দুর্বৃত্তদের হামলা ও ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক »

আবারও দুর্বৃত্তদের হামলায় আক্রান্ত চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব। ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। বুধবার সন্ধ্যায় এ হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

বুধবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় অতর্কিতভাবে প্রেস ক্লাবের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ক্লাবে প্রবেশ করে কিছু দুর্বৃত্ত। পরে তারা চতুর্থ তলায় ক্লাবের মূল অফিসে ওঠে সেখানেও তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।

একপর্যায়ে তারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ বেশকিছু কক্ষে ভাঙচুর চালায়। পরে তারা ক্লাবে উপস্থিত থাকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ সাধারণ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে সিনিয়র সাংবাদিক নির্মল চন্দ্র দাশ, গোলাম মর্তুজা আলী, হেলাল সিকদার আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়।

অবরুদ্ধ হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে থাকা ৪০ জন সদস্যকে উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ, মিডিয়া রুম, মিটিং রুম, হিসাব বিভাগ, রিসিভশন ভাঙচুর করে। তারা সিসিটিভি ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে একদল দুর্বৃত্ত চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হামলা চালায়। তারা অবৈধভাবে ক্লাবের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এই ঘটনা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব নেতারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অবহিত করেছেন।

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পর বুধবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা ও সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিকের নেতৃত্বে ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চর দখলের মতো কাউকে অপকর্ম করতে দেওয়া হবে না। তিনি বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জমানের সঙ্গে কথা বলেন।

এর পাশাপাশি সেনা প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানান, ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট সম্পূর্ণ বেআইনি। তিনি ক্লাবের নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন যে, এ ব্যাপারে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা বলেন, সরকার পতনের পর একদল সুযোগ সন্ধানী ও বহিরাগত সন্ত্রাসী চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে একাধিকবার হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে সবকিছু তছনছ করে ফেলেছে। তারা একাধিকবার লুটপাট চালিয়েছে। সর্বশেষ বুধবার তারা হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। তারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বহিরাগতদের হামলাকে অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন।

বুধবার দুপুরে সিএমপি কমিশনারের কক্ষে প্রেস ক্লাব নেতাদের তারা বলেন, এসব অপকর্মের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। যারা এ দুর্বৃত্তপনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান তারা।

উল্লেখ্য, ১০ তলা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভবনে দৈনিক পত্রিকাসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, হজ কাফেলা, আর্কিটেকচারাল অফিস, মোবাইল কমিউনিকেশন অফিস, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বাতিঘর নামে একটি বই বিপণি কেন্দ্র রয়েছে।