চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি অভ্যয়ারণ্যের জাঙ্গালিয়ায় টানা তিনদিনে পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় অন্তত ১৬ জন নিহতের পর সড়কটিতে ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এসেছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, এখানে বারবার দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো সড়কটি আঁকাবাঁকা ও সরু। ঈদের ছুটির মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক নিয়ে আসা যানবাহনগুলোর চালকদের কাছে সাধারণত সড়কটি অচেনা। আর এ কারণেই তারা বারবার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
দুই লেনের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিয়মিতই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। দুর্ঘটনা কমাতে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি দীর্ঘদিনের। সরকার প্রতিশ্রুতিও দিলেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এক যুগ আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এখন নতুন করে আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলছে।
চার লেন প্রকল্প না হলেও মহাসড়কে যান চলাচলে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত পাঁচটি এলাকায় বাইপাস ও উড়ালসড়ক নির্মাণে ২০২৩ সালের অক্টোবরে একটি প্রকল্পের অনুমোদন হয়। দেড় বছর পার হলেও সেটির কাজও শুরু হয়নি। সওজের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দূরত্ব ১৫৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে কক্সবাজার অংশের দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। বাকি ৮২ কিলোমিটার পড়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত পর্যটন শহর কক্সবাজারে যেতে এই মহাসড়ক ব্যবহার করতে হয়। সরু মহাসড়ক হওয়ার কারণে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ২৭টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৬ জন। এ ছাড়া গত চার বছরে (২০২০-২৪) মারা গেছেন ২২৪ জন-এ তথ্য নিরাপদ সড়ক চাই-এর।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সওজের চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে ১৮ ফুট থেকে ৮২ ফুটে উন্নীত করার জন্য একটি ডিপিপি পাঠানো হয়েছিল। সেটিও অনুমোদিত হয়নি। দুই দফা উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও এখন তৃতীয় দফায় নতুন করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে সওজ। সওজের চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে এই কাজ হচ্ছে। সমীক্ষার কাজ আগামী সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. সামছুল হক বলেন, মহাসড়কটি সরু ও আঁকাবাঁকা। গাড়ির চাপ নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ধারণক্ষমতা নেই। এর মধ্যে বৈধ-অবৈধ নানা ধরনের গাড়ি চলাচল করে। সড়কের দুই পাশে রয়েছে বাজারও। মোড়ে মোড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোসহ বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করে সড়কটিতে। এ জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করে দিলে সড়কটি অনেকটাই নিরাপদ হবে।
আসলে কাগজে-কলমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ককে মহাসড়ক বলা হলেও এটি এখনো গ্রামীণ পথের মতো। এটাকে নিরাপদ করতে হলে চারলেনে উন্নীত করতে হবে। নতুবা মৃত্যুর মিছিল থামবে না।