এবারের ঈদুল আজহায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করে। এর মধ্যে এক জোড়া কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল। ১২ জুন থেকে এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২৪ জুন পর্যন্ত চলার কথা ছিল।
এর আগে পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যে ট্রেনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও ইঞ্জিন ও জনবল সংকটের কারণ দেখিয়ে গত ৩০ মে ট্রেনটি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এরপর এই ঈদুল আজহায় আবার বিশেষ ট্রেনটি চালু করে। তবে সেটিও নির্ধারিত মেয়াদ শেষে বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। তার আগে স্থায়ী ট্রেন চালুর দাবিতে আন্দোলনে নামে এই দুই জেলার বাসিন্দারা।
নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সোমবার ছিল বিশেষ ট্রেন চলাচলের শেষ দিন। তবে এর আগে রবিবার দুপুরে সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ব্যানারে একটি সংগঠন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেয়, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হলে কক্সবাজারগামী সব ট্রেন অচল করে দেওয়া হবে। সে সঙ্গে বাণিজ্যিক নগরীর মানুষের যাতায়াতের সুবিধায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চালু করা বিশেষ ট্রেনকে পৃথক স্থায়ী ট্রেন হিসেবে পরিচালনার দাবি জানায় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সোমবার এক বিবৃতিতে ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনটির চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতারা দাবি বাস্তবায়নে গড়িমসি করা হলে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন । বিবৃতিতে তারা বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে স্পেশাল ট্রেন চালু করে। যাত্রীদের চাহিদা ও বেশ লাভজনক হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ট্রেনটির চলাচলের মেয়াদ বাড়ায়। কিন্তু দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রেলের লাভজনক রুটটিতে কেন বিশেষ বিশেষ সময় বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করতে হবে? কেন স্থায়ী ট্রেন সার্ভিস চালু হবে না?
গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেললাইনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর চলতি বছর ১০ জানুয়ারি পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন চালু করা হয়। শুধু ঢাকা-কক্সবাজার রুটের দুটি ট্রেনের প্রতিটিতে ১১৫টি করে আসন বরাদ্দ রাখা হয় চট্টগ্রাম স্টেশনের জন্য। ঢাকা থেকে পরপর দুটি ট্রেন চালু করলেও চট্টগ্রাম থেকে কোনো ট্রেন দেওয়া হয়নি। রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও সেটা কেন স্থায়ী করা হচ্ছে না তা বড় রহস্যময়। এ রেললাইন তো শুধু রাজধানীবাসীর সুবিধার জন্য করা হয়নি। চট্টগ্রামের মানুষ যদি এই সুবিধা না-ই পেল তাহলে কার স্বার্থে এত টাকা খরচ হলো তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই জনগণ রাখে। যে রুট লাভজনক সে রুটে ট্রেন না চালানোর পেছনে প্রকৃত কারণ কী তা জানা দরকার। আমরা আশা করব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পরিষ্কার করবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ