গত বছর ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন রেল লাইনটির উদ্বোধনের পর পয়লা ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সাবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয় যেটির নাম রাখা হয় কক্সাবাজার এক্সপ্রেস। পরে এ বছর জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে একই রুটে পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরও একটি ট্রেন চালু করা হয়। এই দুটি ট্রেনই চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিলেও শুধুমাত্র চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাতায়াতের কোনো পৃথক ট্রেন চালু করা হয়নি। এনিয়ে সেখানকার মানুষ নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং বিভিন্ন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম থেকে এই রুটে ট্রেন চলাচলের দাবি ওঠে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ৮ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ একটি ট্রেন চালু করেছিল কর্তৃপক্ষ। যাত্রী চাহিদা ও স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ট্রেনটি ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। পরে ৩০ মে তা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু সব জায়গায় চলে সমালোচনার ঝড়। যাত্রী কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকেও জানানো হয় প্রতিবাদ। অনেকে দাবি করেন বাস মালিকদের সুবিধা পাইয়ে দিতে রেলওয়ের কতিপয় কর্মকর্তা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এরপর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ইঞ্জিন ও লোকো মাস্টার সংকটের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী একমাত্র বিশেষ ট্রেন ‘কক্সবাজার স্পেশাল’। এখন ঈদুল আজহা উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ফের ট্রেনটি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃৃপক্ষ। শুক্রবার বিকেলে রেলওয়ে সূত্রে ট্রেন চালু করার বিষয়টি জানা গেছে। এদিন রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, গত রোজার ঈদে এ রুটে ট্রেনটি চালু করা হয়। পরবর্তীতে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় আর বন্ধ করা হয়নি। লোকো ড্রাইভার ও গার্ড স্বল্পতা এবং মিটারগেজ ইঞ্জিনের সংকট বিবেচনায় গতকাল থেকে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে আগামী ১২ জুন থেকে ঈদ স্পেশাল হিসেবে ফের ট্রেনটি চালানোর পরিকল্পনা আছে।
এদিকে পূর্বাঞ্চল রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্পেশাল ট্রেনটি নিয়মিত চালু থাকবে না। ঈদ উপলক্ষে পুনরায় চালুর পর ১০ থেকে ১২ দিন চলবে। এরপর ফের বন্ধ করে দেওয়া হবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এমন আচরণকে সিদ্ধান্তহীনতা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমনতা হিসেবে গন্য করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প শেষ হলে এই লাইনে ট্রেন চলবে এটাই স্বাভাবিক। লোক দেখানোর জন্য তো হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়নি। কাজেই এই রুটে কয়টি ট্রেন চলবে এবং সে ট্রেন চালাতে কী কী প্রয়োজন হতে পারে সে হিসাব তো সে সময়ে করে রেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। রেললাইন উদ্বোধনের পর একবার শুধু ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালু করা পরে জনমতের চাপে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চালু করে তা বন্ধ করে দেওয়া হটকারি সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে। এখন কেন লোকোমাস্টার ও ইঞ্জিন সংকটের কথা বলা হচ্ছে। সে প্রস্তুতি আগে থেকে কেন নেওয়া হলো না সে প্রশ্নের জবাব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দেবেন কি? এর সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে জনগণ ধরে নেবে কোনো পক্ষকে লাভবান করতে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা।
মতামত