চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার। দুই ঘণ্টায় এই দূরত্ব অতিক্রম করার সুযোগ থাকলেও সময় লেগে যায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। রাস্তাটির বেহাল দশা দেশের সেরা পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশে অন্তরায় হয়ে উঠেছে।
মহাসড়কের জন্য ৬০ ফুট থেকে ১০৪ ফুট পর্যন্ত জায়গা অধিগ্রহণ করা থাকলেও দুই লেনের মূল সড়কটি মাত্র ২৪ ফুটের। সড়কের উভয় পাশের শত শত একর জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। সড়কের অবস্থা নাজুক করে তুলেছে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বাজার ও অগুনতি বাঁক। একেকটি বাঁক যেন মৃত্যুফাঁদ।
সড়কের বিভিন্ন অংশে থাকা বাঁকগুলো এতই বাঁকানো যে, একদিক থেকে গাড়ি এলে অন্যদিকে দেখা যায় না। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। এই বাঁকগুলো অনেক মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছে। এসব বাঁক সোজা না করে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত কিংবা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলেও সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার ঘোষণা দেন।
এরই প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ১৩৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করার পৃথক একটি প্রকল্প তৈরি করে। এই প্রকল্পটিতে পটিয়ার মইজ্যারটেক থেকে কক্সবাজারের রিং রোড পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, চার লেন সড়কের মূল সড়ক হবে ৮২ ফুট প্রস্থ। সড়কের উভয় দিকে ২৪ ফুট চওড়া ফুটপাত এবং মধ্যে ডিভাইডার থাকবে। ১২ ফুট প্রস্থ একটি সাবলেনও রাখা হবে; যাতে স্থানীয় হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারে। মহাসড়কের চট্টগ্রাম অংশে ৬৮ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার অংশে ৬৮ কিলোমিটার রয়েছে। প্রজেক্ট প্রোফাইল অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে প্রায় ৭৮ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এছাড়া ৩৩টি সেতু, ১৩৯টি কালভার্ট, ১৩টি ফুট ওভারব্রিজ এবং কেরানীহাট ও চকরিয়ায় দুটি ফ্লাইওভার রয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে একটি সমীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুয়েটকে দেওয়া হয় এই দায়িত্ব। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম প্রকল্পটি নিয়ে কাজ শুরু করে। বেশ কিছুদিন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও করোনার শুরুতে বুয়েট টিমের সমীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। নয় মাসের বেশি সময় ধরে সমীক্ষা বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ শুরু হবে তা অনিশ্চিত।
এই সমীক্ষা রিপোর্টের ওপরই প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হবে নাকি এক্সপ্রেসওয়ে হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে সমীক্ষা রিপোর্টের পর। আবার এটা ভূমি দিয়ে যাবে নাকি পুরোটাই ফ্লাইওভার টাইপে করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতেও সমীক্ষা রিপোর্টের ওপর নির্ভর করতে হবে।
কিন্তু বুয়েটের সমীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ বন্ধ আছে। এরমধ্যে ২০২৫ সাল থেকে মাতারবাড়ি বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং শুরু হওয়ার কথা। সে সঙ্গে এই মহাসড়কের ওপর নির্ভর করছে পূর্বমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার সবকিছু। কাজেই সমীক্ষার কাজ যত দ্রুত শুরু করা যাবে তাতে দেশেরই মঙ্গল হবে।
মতামত সম্পাদকীয়