চট্টগ্রাম ওয়াসার পরিকল্পনায় কি ঘাটতি আছে?

চট্টগ্রাম ওয়াসার মতে, বর্তমানে নগরে দৈনিক ৫৬ কোটি লিটার সুপেয় পানির চাহিদা রয়েছে। তারা সর্বোচ্চ ৫০ কোটি লিটার পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারে। ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইনে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই পানি সরবরাহ করা হয়। পুরো শহর তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। বর্তমানে তারা মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের কাছে পানি দিতে পারে। তবে পত্রিকা বলছে, কমপক্ষে ১০০টি এলাকার অন্তত ১২ লাখ মানুষ ওয়াসার পানি একেবারেই পান না।

অন্যদিকে গ্রাহকেরা বলছেন, ওয়াসার এই তথ্যে গরমিল রয়েছে। পানি না পাওয়া মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। তাদের মতে, এখনো শতাধিক এলাকায় পানির কোনো পাইপলাইনই নেই। ওয়াসা স্বীকার করে সিটি করপোরেশনের ১, ২, ১০, ১১, ১৮, ৩৭ থেকে ৪১ নম্বর-এই ১০ ওয়ার্ডের শতাধিক এলাকায় এখনো ওয়াসার লাইন পৌঁছেনি।

চট্টগ্রাম নগরে এখনই পানির এমন তীব্র সংকট রয়েছে। শহরের পরিধি বাড়ছে এবং গড়ে উঠছে নতুন নতুন বসতি। এ কারণে বাড়ছে পানির চাহিদাও। ২০৫২ সালে পানির চাহিদা পৌঁছাবে দিনে ১৩৭ কোটি লিটার। তবে এই চাহিদা আদৌ সংস্থাটি মেটাতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এর পাশাপাশি ওয়াসার আরেকটি সংবাদ হচ্ছে, ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের জ্যৈষ্ঠপুরায় ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গাজুড়ে স্থাপন করা হয় ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প। কথা ছিল আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী- তিন উপজেলার ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহক তো বটেই এখান থেকে পানি পাবে ছোট-বড় ১৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি প্রকল্পটি। গ্রাহকদের আগ্রহ কম এমন অজুহাত দেখাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘চাহিদা নেই’ বলে সরবরাহ করা হচ্ছে না পানি। দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে তোলা হয় প্রকল্পটি। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলেছে শোধনাগারের কমিশনিং। কিন্তু কয়েক দফা সময় পরিবর্তনের পরেও প্রকল্পটি থেকে পানি সরবরাহ শুরুর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রাক্কলিত চাহিদা অনুযায়ী, গ্রাহক না পাওয়ায় প্রকল্পটি চালুর উদ্যোগ বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে।
প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, এ প্রকল্প থেকে ছোট-বড় মোট ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগের মাধ্যমে শিল্পাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। অন্যদিকে, এই প্রকল্পের পানির দুই কোটি লিটার আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী- তিন উপজেলার ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহক এবং ১৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পানি পাবে এই প্রকল্প থেকে।
ওয়াসা একদিকে পানি দিতে পারছে না। অন্যদিকে পানির গ্রাহক পাচ্ছে না। আসলে সমস্যাটি কোথায়? ওয়াসা কি যুগোপযোগী ও অগ্রাধিকার ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে অপারগ? চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ কুমার পাল স্থানীয় একটি পত্রিকাকে বলেছেন, চাহিদা পূরণে যে ধরনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি দরকার, তার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, পানির ঘাটতি পূরণের আগে দরকার এখন ওয়াসার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির ঘাটতি পূরণ।