বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তার মধ্যে ১৭ শতাংশরই হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন তরুণের মধ্যে একজন হৃদরোগের ঝুঁকিতে আছে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টোরেল, স্থুলতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, ধুমপান, মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, সারা বিশ্বে বছরে ১৯ লাখ মানুষ তামাকের কারণে হৃদরোগে মারা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) তামাক ব্যবহার করছে, যা হৃদরোগকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যার ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক।
চট্টগ্রামে হৃদরোগীর চাপ বাড়লেও সে তুলনায় চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়েনি। বেসরকারি বেশ কিছু হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা চালু থাকলেও খরচের কারণে গরিব ও অসহায় রোগীরা সেখানে চিকিৎসা নিতে পারেন না। এসব রোগীদের একমাত্র ঠিকানা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। সেখানেও প্রায় সময় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ তিনগুণ রোগীর ভর্তি থাকে। ফলে হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকদের রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের দুটি ক্যাথ ল্যাবের মধ্যে একটি প্রায় তিন বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে একটি মেশিন দিয়ে রোগীদের এনজিওগ্রাম ও হার্টে রিং লাগানোসহ যাবতীয় কাজ চালাতে হচ্ছে। এই মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেলে রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন বলছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে চট্টগ্রামে হৃদরোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল না থাকায় রোগীদের অনেকে ঢাকায় কিংবা দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়।
বিকল্প না থাকায়, চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চট্টগ্রাম নগর, জেলার উপজেলাগুলোসহ রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া৷ জেলার বিশাল জনগোষ্ঠী চিকিৎসা নিতে এই হাসপাতালে আসে। প্রায় ৪ কোটি মানুষের ভরসাস্থল হৃদরোগ বিভাগ। কিন্তু তারপরও সে তুলনায় হৃদরোগ বিভাগের সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। এখনো বিশাল সংখ্যক রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেলের হৃদরোগ বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে রোগীরা আরো বেশি উপকৃত হবেন। বেসরকারি হাসপাতালে একজন রোগী যে চিকিৎসা পেয়ে থাকেন, সেই চিকিৎসার আার্থিকমূল্য হিসেব করলে চমেক হাসপাতালে তার খরচ পড়ে পাঁচ ভাগের এক ভাগ। ক্ষেত্রবিশেষে আরো কম।
চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ দে নিজেই গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের হৃদরোগ বিভাগে প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ বাড়ছে। সে তুলনায় সক্ষমতা বাড়েনি। আমাদের দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্যে একটি দীর্ঘ সময় ধরে নষ্ট পড়ে আছে। শুনেছি, নতুন একটি মেশিন কেনা হচ্ছে। বর্তমানে বাধ্য হয়ে আমাদের একটি ক্যাথল্যাব মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। এ মেশিনটিতে একবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। একটি মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে গিয়ে মেশিনের ওপর চাপ বাড়ছে। তাই এই মেশিন নষ্ট হলে কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
এই পরিস্থিতি বিরাজমান চট্টগ্রামে হৃদরোগ চিকিৎসা। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঢাকার পরে চট্টগ্রামের স্থান হলেও অনেককিছুর মতো চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবধান যোজন যোজন দূরে।
এ দূরত্বের অবসান কবে ঘটবে?