চট্টগ্রামে শীতের প্রকোপ বাড়ছে, জরুরি কিছু পদক্ষেপ দরকার

চট্টগ্রামের প্রকৃতিতে এখন উত্তুরে হাওয়ার দাপট। গত কয়েক দিন ধরে বন্দরনগরীসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে ভোরের ঘন কুয়াশা আর রাতের হাড়কাঁপানো ঠান্ডা জানান দিচ্ছে যে, শীত এবার বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। পাহাড়ি এলাকা ঘেরা এই অঞ্চলে সমুদ্রের আর্দ্রতা ও শীতল বাতাসের মিশ্রণ জনজীবনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ বয়ে এনেছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বিশেষ সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

শীতের এই তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতি বছরই বৃদ্ধি পায় ঋতু পরিবর্তনজনিত নানা রোগব্যাধি। বিশেষ করে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া এবং কোল্ড ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ইতিমধ্যে শীতকালীন রোগীর ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। এই সময়ে তাই ব্যক্তিগত সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরিধান করা, কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।

শীতের প্রকোপে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষ। নগরের রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল এবং ফুটপাতে রাত কাটানো মানুষদের জন্য এই শীত অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান—আপনাদের অব্যবহৃত গরম কাপড় কিংবা সামর্থ্য অনুযায়ী কম্বল নিয়ে এই শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ান। মনে রাখতে হবে, আপনার সামন্য সহানুভূতি একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।
পাশাপাশি, চট্টগ্রামের কৃষি ও গবাদি পশুর ক্ষেত্রেও বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। ঘন কুয়াশা অনেক সময় ফসলের ক্ষতি করে, বিশেষ করে শীতকালীন সবজির ক্ষেত্রে বাড়তি যত্ন নিতে হবে। খামারিদের উচিত তাদের গবাদি পশুকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় শেড ও খাবারের ব্যবস্থা করা।
শীত কেবল উপভোগের ঋতু নয়, এটি সতর্ক থাকারও সময়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতকালীন রোগব্যাধি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। আমরা যদি ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে সচেতন থাকি এবং একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই, তবেই এই শীতের প্রকোপ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।