চট্টগ্রামে ভারতের সহকারি হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলা : আটক ১২

রাজিব শর্মা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ড. রাজীব রঞ্জনের বাসভবন ও কাযালয়ে হামলা চালিয়েছে একদল বিক্ষোভকারী। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত একজন আন্দোলনকারী আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নগরের খুলশী এলাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ওসমান হাদিও মৃত্যুর খবর শুনে বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ১১টার পরে ছাত্র-জনতার ব্যানারে একদল যুবক দুই নম্বর গেট এলাকায় জমায়েত হন। সেখানে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করেন। সেখান থেকে খুলশী এলাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন ৫০ থেকে ৬০ জনের একদল তরুণ।

এসময় তাদের হাতে থাকা ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুরসহ নানা ঘটনা ঘটে। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেন। ঘটনাস্থল থেকে এ পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাদির মৃত্যু সংবাদ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই রাত পৌনে ১১টার দিকে ‘ছাত্র-জনতা পরিচয়ে’ বেশকিছু ছাত্র জনতা ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা হাদির হত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তারা হাতে থাকা ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ কার্যালয়ের সামনে থাকা বিভিন্নস্থানে ভাঙচুর করেন। পুলিশ লাটিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেন।

ভারতীয় হাইকমিশন অফিসে কর্মরত এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘হঠাৎ করে একদল লোক এসে অফিসের সামনে হামলা শুরু করলো। প্রথমেই কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। কেন এসব হামলা হচ্ছে, কি কারনে হচ্ছে তা নিশ্চিত হওয়ার আগেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ দেখেই আমরা নিরাপদস্থানে সরে পড়ি। অন্তত ২০০ এর বেশি ইটপাটকেল অফিসে পড়েছে। আজ ভাগ্যিস পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করেছিলেন। নয়তো আমাদের বড় বিপদ হতো। এখনো(শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা) আমাদের পুলিশ প্রশাসন পাহারা দিয়ে রেখেছেন। আমরা বেশ আইনী সহযোগিতা পাচ্ছি।’

অন্যদিকে একই রাতে আওয়ামী লীগ আমলের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চশমা হিলের বাসভবনে যান কয়েকটি দল। প্রথমে ভবনের সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন বাসায় প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন আলম বলেন, ‘ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়ার পর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা, আমরা যাছাই বাছাই করছি। ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান ভারতীয় হাই কমিশনের ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
এদিকে ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

সিএমপি কমিশনার বলেন, ঘটনার সময় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার তার বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন। বিক্ষোভকারীরা বাসভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অভিযানে জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাসভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ড. রাজীব রঞ্জন।