বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেছেন, সরকার বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক স্থাপনা, প্রাকৃতিক বৈচিত্র, পাহাড়, নদী-সমুদ্রকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করতে চট্টগ্রামে বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কর্ণফুলি টানেল, এয়ার পোর্ট হতে দেওয়ান হাট এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ, দোহাজারী হতে ঘুমধুম রেল সম্প্রসারণ, বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ, আউটার রিং রোড ও বায়েজিদ লিংক রোড চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
তিনি গতকাল চট্টগ্রামের প্রথম পাঁচতারকা হোটেল আগ্রাবাদের সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন- চট্টগ্রামে বাড়ছে দেশি বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের আনাগোনা। তাই আরো অধিক হারে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল মোটেল গড়ে তোলা প্রয়োজন। কেবল সরকারি উদ্যোগে পর্যটনকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। সরকার নীতিমালা তৈরি করবে, পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে পর্যটন শিল্পের বিকাশে হোটেল আগ্রাবাদ চট্টগ্রামের হোটেল-মোটেল ব্যবসার পথিকৃৎ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আরো বলেন, চট্টগ্রামের সৌন্দর্য আদিকাল থেকেই বিদেশি পরিব্রাজক ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে। ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাং, ভাস্কো দা গামা চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের টানে অনেক দূর থেকে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে এ ভারতীয় উপমহাদেশ ও চট্টগ্রামে এসেছেন। পর্তুগীজরা ব্যাবসা বাণিজ্য করতে এসে চট্টগ্রামের পরিবেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এখানে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান চট্টগ্রামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের পর্যটনকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে এর বাস্তবায়ন আর এগোয়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর সকল স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, পর্যটক ও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ, নিরাপত্তা বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয়। এ ব্যাপারে শিল্প পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশকে দিন দিন আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে হোটেল আগ্রাবাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। রেডক্রিসেন্ট এর কার্যক্রম হোটেল আগ্রাবাদ থেকে পরিচালিত হতো। একসময় হোটেল আগ্রাবাদ ছিল চট্টগ্রামের মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো এক ব্যাপার। এই হোটেলের ইছামতি হল থেকে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক বিকাশে অনেক কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রী, এমপি, দেশি-বিদেশি খেলোয়ার, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে এলে হোটেল আগ্রাবাদেই অবস্থান করেছেন।
হোটেল আগ্রাবাদ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম হাকিম আলী বলেন, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধাসম্বলিত হোটেল আগ্রাবাদ প্রতিষ্ঠা করা ছিল মরহুম সবদার আলীর একটি সাহসী পদক্ষেপ।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, এফবিসিসিআইএ’র পরিচলক ড. মুনাল মাহাবুব। এছাড়া সাবেক মহিলা সাংসদ সাবিহা মুছা, সিডাব্লিউ সিসিআই এর প্রথম সহসভাপতি আবিদা মোস্তাফা, হোটেলের এজিএম হাসানুল ইসলাম, মানব সম্পদ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক সাইফুর রহমান, রুম ডিভিশন ম্যানেজার রায়হান কায়সার, সিনিয়র ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ম্যানেজার মনিরুল আলম সরকার, সিনিয়র হিসাব ব্যবস্থাপক জামাল হোসেন, ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার এ.কে এম শাহরিয়ার, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মোরশেদুল আলম এসময় উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি