ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে ৯০ শতাংশের বেশি ক্যান্সার শনাক্ত করা হয় পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (পিইটি) ও সিঙ্গেল প্রোটন ইমিশন কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (এসপিইসিটি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে। পেট–সিটির মাধ্যমে দ্রুত ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব, তাই এটিই এখন আধুনিক প্রযুক্তি বলে স্বীকৃত। পেট সিটি অন্যান্য ইমেজিং টেকনোলজি যেমন এক্সরে, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই প্রভৃতি প্রযুক্তি থেকে ভিন্নমাত্রার। কারণ ওইগুলো শুধু শরীরে টিউমারের আকার, আকৃতি, অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দেয়। কিন্তু পেট সিটি ক্যান্সার (ম্যালিগন্যান্ট টিউমার) বা ক্যান্সার নয় (বিনাইন টিউমার) দুটো সম্পর্কেই ধারণা দিতে সক্ষম। পেট একটি টিউমারের বিপাক ক্রিয়া এবং সিটি ওই টিউমারের গঠনগত পরিবর্তন নির্ণয় করে। এই দুটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত স্ক্যানারে একটি ফিউশন ইমেজ একই সময়ে পাওয়া যায়। এই দুটো ইমেজের সমন্বিত ইমেজটি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে শরীরের যেসব স্থানের কোষগুলো বেশি সক্রিয় অর্থাৎ ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
বর্তমানে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (নিনমাস) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ক্যাম্পাস, ইনমাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাস, রাজধানীর অদূরে সাভার বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্র ছাড়াও ঢাকার তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে পেট সিটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে পেট সিটি পরীক্ষার প্রধান উপাদান রেডিও আইসোটোপ উৎপাদনকারী ‘সাইক্লোট্রন’ মেশিন আছে কেবল নিনমাস বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাস এবং অপরটি ঢাকার একটি কর্পোরেট হাসপাতালে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর শুধু পেট সিটি মেশিন রয়েছে। তারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে রেডিও আইসোটোপ নিয়ে পেট সিটি পরীক্ষাটি সম্পন্ন করছে।
চট্টগ্রামে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে কোথাও পেট–সিটি ল্যাব না থাকায় ক্যান্সার নির্ণয়ের এই অত্যাধুনিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে রোগীদের। অনেক রোগী ঢাকায় যাতায়াতের ধকল নিতে না পারার কারণেও পরীক্ষাটি করতে পারছেন না। ফলে প্রায়শ চিকিৎসকদের কিছুটা ধারণার ভিত্তিতেও রেডিওথেরাপি কিংবা কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। অথচ পেট–সিটি পরীক্ষা করানো গেলে রোগীর ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের উৎপত্তি এবং কোথায় কোথায় এই ক্যান্সার কোষ ছড়িয়েছে, সেটি বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়। এছাড়া ক্যান্সার চিকিৎসাও আরও নিখুঁতভাবে দেয়া যাবে।
গত ২০১৯–২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চমেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় ছয় তলা বিশিষ্ট ভবন, মলিকুলার ল্যাব ও সাইক্লোট্রন সুবিধাসহ পেট–সিটি মেশিন রয়েছে। আমরা আশা করি প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শেষ হবে। রাজধানী ঢাকার পরে চট্টগ্রামের স্থান হলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম এখনও অনেক পিছিয়ে। এদিকে নজর দিতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ