চমেক হাসপাতালেও ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর প্রস্তুতি
সালাহ উদ্দিন সায়েম :
চট্টগ্রামে যখন নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য শয্যা সংকটের উপক্রম দেখা দিয়েছে, তখন এগিয়ে এলো নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজ । হাসপাতালটিতে দুটি ভেন্টিলেটরসহ ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর প্রস্তুতি চলছে।
মা ও শিশু হাসপাতালের পর চট্টগ্রামের বাকি পাঁচ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ-ইউএসটিসি ও বিজিসি ট্রাস্ট, সাউদার্ন, মেরিন সিটি ও ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের দিকে তাকিয়ে আছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য প্রশাসন।
মা ও শিশু হাসপাতালের নবনির্মিত ১১ তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় এই করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে। এই আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রতিটি শয্যায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমও রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসা দেওয়া আর কোনো হাসপাতালের শয্যায় এই অক্সিজেন সুবিধা নেই।
হাসপাতালটির নবনির্মিত ১১ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় ইতোমধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের কানেকশনসহ ২০টি শয্যা স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বসানো হয়েছে দুটি ভেন্টিলেটরও। এছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে।
শনিবার চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে করোনা চিকিৎসার অনুমোদন চাইবে মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন পেলে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম আজাদ।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমি কিছু দিন আগে মা ও শিশু হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। তাদের নিজস্ব ডাক্তার ও নার্স রয়েছে। আছে লজিস্টিক সাপোর্টও। করোনা ইউনিটের জন্য তাদের সব ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। আমরা দ্রুত তাদের অনুমোদন দিয়ে দিবো।’
মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম আজাদ সুপ্রভাতকে বলেন, চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার হাসপাতালগুলোতে অপ্রতুল শয্যার কথা চিন্তা করে আমরা এখানে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করেছি। আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এগিয়ে এসেছি যাতে চিকিৎসার অভাবে কেউ মারা না যান।
মা ও শিশু হাসপাতাল ছাড়া চট্টগ্রামে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে আরো পাঁচটি। এগুলো হলো-পাহাড়তলী ইউএসটিসি, চন্দনাইশ বিজিসি ট্রাস্ট, নাসিরাবাদ সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজ, বায়েজিদ মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজ ও চান্দগাঁও ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুুন কবীর। ইতোমধ্যে হাসপাতালটিতে ৩০ শয্যার করোনা পর্যবেক্ষণ সেল চালু করা হয়েছে।
মা ও শিশু হাসপাতাল ছাড়া অন্যান্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার যাবতীয় সুযোগ সুবিধা থাকলেও সেখানে করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ড গড়ে তোলা হচ্ছে না কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।
তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, মা ও শিশু হাসপাতাল যদি এগিয়ে অন্য বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো কেন এগিয়ে আসবে না? চট্টগ্রামে এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সহসাই করোনা চিকিৎসার তিনটি হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দেবে। এ অবস্থায় বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী, বেসরকারী হাসপাতালে সংক্রমণ চিকিৎসায় আইসোলেশন ইউনিট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ চট্টগ্রামে বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট নেই। এখন চট্টগ্রামে করোনার এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে আইসোলেশন ইউনিট যত দ্রুত সম্ভব চালু করা উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএসটিসি ও বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজ, বায়েজিদ মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজ ও চান্দগাঁও ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় এসব বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আইসোলেশন ইউনিট চালু করার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সুপ্রভাতকে বলেন, চট্টগ্রামে এখন যে তিনটি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে যদি সংকট দেখা দেয় তাহলে আমরা বেসরকারি মেডিক্যালের কথা মাথায় রেখেছি।