এই অঞ্চলের সবেধন নীলমনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে। অবশ্য বিষয়টি নতুন নয়। এটি নৈমিত্তিক ঘটনা। এবার শীত মৌসুমে হৃদরোগীর সংখ্যা অন্য সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৩০ শতাংশ। বেড না থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে যথারীতি । চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হৃদরোগের নির্দিষ্ট কোনো সময় না থাকলেও দেখা যায়, শীতে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ে। বর্তমানে হাসপাতালে অনুমোদিত বেডের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি রোগী ভর্তি থাকছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগী বাড়ার কারণে চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এটাও চমেকের নৈমিত্তিক ঘটনা। বিশেষ করে অনেক রোগীর জরুরি ভিত্তিতে এনজিওগ্রাম কিংবা রিং লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু হৃদরোগ বিভাগের দুটি এনজিওগ্রাম মেশিনের একটি তিন বছরের বেশি সময় ধরে নষ্ট থাকায় জরুরি সেবা পাচ্ছেন না অনেক রোগী। এই পরিস্থিতিতে স্বচ্ছলরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল–ক্লিনিকে চিকিৎসা নিলেও বিপাকে পড়ছেন দরিদ্র রোগীরা। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও অনেক রোগী এনজিওগ্রাম কিংবা রিং লাগাতে পারছেন না। এতে অনেক রোগী মারাও যাচ্ছেন।
১৯৯৮ সালে চমেক হাসপাতালে মাত্র ৬টি শয্যা নিয়ে হৃদরোগ বিভাগটি চালু হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সেটি ১৬০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে যেহেতু চট্টগ্রাম অঞ্চলে হৃদরোগীর প্রকোপ বেশি, তাই এই সংখ্যাটি যে অপ্রতুল তা প্রমাণিত হতে সময় লাগেনি। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় সময় শয্যা সংখ্যার দ্বিগুণের কাছাকাছি রোগী ভর্তি থাকে। ফলে সেবার মানের দিক থেকেও প্রায় সময় ধীরগতির অভিযোগ ওঠে। এটা না হয়ে উপায় নেই কারণ, অতিরিক্ত রোগী সামলাবার মতো প্রয়োজনীয় জনবল তো নেই-ই তার ওপর চিকিৎসকদের অতিরিক্ত কাজের চাপ তো আছেই।
আবার বর্তমানে প্রায় সব বিভাগে অধ্যাপক পদ থাকলেও হৃদরোগ বিভাগে নেই কোনো অধ্যাপক পদ। বর্তমানে বিভাগে তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, ৮ জন সহকারী অধ্যাপক, ৩ জন কনসালটেন্ট, একজন রেজিস্ট্রার ও তিনজন সহকারী রেজিস্ট্রার কর্মরত রয়েছেন। হাসপাতালে অনুমোদিত পদ আছে একজন সহযোগী অধ্যাপক ও দুজন সহকারী অধ্যাপকের। বাকিরা সবাই সংযুক্তিতে কাজ করছেন।
চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন, হৃদরোগ বিভাগের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তবে এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই বিভাগটি ৩৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠা হলেও এখনো অনুমোদিত চিকিৎসক রয়েছেন খুবই কম। অধ্যাপকের কোনো পদ নেই, যা অস্বাভাবিক। এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নজর দেওয়া উচিত। কারণ এই হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ওপর চট্টগ্রামের আশপাশের বিভিন্ন জেলা–উপজেলার অন্তত ৪ কোটি মানুষ নির্ভরশীল। চট্টগ্রামের হৃদরোগের আর কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই। এছাড়া গরিব রোগীদের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল। অন্যদিকে আমাদের বিভাগে হৃদরোগের ওপর ডিপ্লোমা, এমডি ও এফসিপিএস কোর্স চালু রয়েছে। তাই এই বিভাগে অধ্যাপক পদ সৃজন করা জরুরি।
বর্তমানে একটি এনজিওগ্রাম মেশিন দীর্ঘ সময় ধরে নষ্ট থাকায় অনেক রোগীর এনজিওগ্রাম, রিং লাগানো, পার্মামেন্ট পেসমেকার স্থাপনের কাজ সঠিক সময়ে করা যাচ্ছে না। এতে রোগীরা সমস্যার সম্মুখীন হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আশ্চর্যজনক। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হোক। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা হোক।
এ মুহূর্তের সংবাদ