চট্টগ্রামে অবিবাহিত নারীর চেয়ে অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা বেশি

দশ বছরে চট্টগ্রামে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর চট্টগ্রাম জেলার প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বিগত দশ বছরে চট্টগ্রাম জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৫ জন । হিসাব করলে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বেড়েছে ২৯৪ জন। যার মধ্যে অবিবাহিত নারীর চেয়ে অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে বিবাহিত পুরুষের চেয়ে বিবাহিত নারীর সংখ্যা বেশি। শিক্ষা, প্রযুক্তি, স্বাক্ষরতায় নারীর চেয়ে পুরুষেরা এগিয়ে আছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেন জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান।

বর্গকিলোমিটারে বেড়েছে ২৯৪ জন 

তথ্যমতে, সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে মোট জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন। ২০১১ সালে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ ১৬ হাজার জন। সে হিসেবে দশ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৫ জন। এর মধ্যে পল্লী অঞ্চলে জনসংখ্যা ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৯ জন এবং শহর অঞ্চলে জনসংখ্যা ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করেন ১ হাজার ৭৩৬ জন। যা ২০১১ সালে ছিল ১ হাজার ৪৪২ জন। জেলায় জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১১ সালে এ হার ছিল ১ দশমিক ৪০ শতাংশ।

জনসংখ্যায় সবচেয়ে বেশি আছে মুসলিম সম্প্রদায়। এ সংখ্যা ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। হিন্দু ১০ দশমিক ৭২, বৌদ্ধ ১ দশমিক ৬৩, খ্রিস্টান শূন্য দশমিক ০৯, আর অন্যান্য শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ।

অবিবাহিত পুরুষের হার বেশি

শুমারিতে অবিবাহিত নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি।  অবিবাহিত নারী ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশের বিপরীতে পুরুষের হার ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মানে অবিবাহিত নারীর চেয়ে অবিবাহিত পুরুষ ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে জনসংখ্যায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। প্রতি ১০০ জন নারীর অনুপাতে পুরুষের সংখ্যা ৯৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চট্টগ্রামে পুরুষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ১১৩ জন এবং নারীর সংখ্যা ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৬ জন। সে হিসেবে ২৮ হাজার ৮১৩ জন নারী বেশি।

বিবাহিতা নারীর হার বেশি

আবার বিবাহিত পুরুষের চেয়ে বিবাহিতা নারীর হার বেশি। বিবাহিত নারী ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, বিবাহিত পুরষ ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বিধবা ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ, বিপতœীক শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ, তালাকপ্রাপ্ত নারী শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ, পুরুষ শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ, দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন নারী শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ, পুরুষ শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ।

বেশি জনসংখ্যা ফটিকছড়িতে, কম কর্ণফুলীতে

উপজেলার মধ্যে বেশি জনসংখ্যা ফটিকছড়িতে আর সবচেয়ে কম কর্ণফুলী উপজেলায়। ফটিকছড়ি উপজেলায় জনসংখ্যা ৬ লাখ ৪২ হাজার ৭৬ জন আর কর্ণফুলীতে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৯৭ জন। এছাড়া বাঁশখালীতে ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৫, সীতাকু-ে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬, হাটহাজারীতে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৯, সাতকানিয়ায় ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫১, মিরসরাইয়ে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৭, আনোয়ারায় ৩ লাখ ১৯ হাজার ৪৮২, লোহাগাড়ায় ৩ লাখ ২৮ হাজার ২০৬, পটিয়ায় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭২, রাঙ্গুনিয়ায় ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৯৮, রাউজানে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০,  সন্দ্বীপে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৩, বোয়ালখালীতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৭৫, চন্দনাইশে ২ লাখ ৫২ হাজার ২৩৮ জন।

স্বাক্ষরতায় পুরুষ এগিয়ে

সাক্ষরতার হারে নারীদের চেয়ে পুুরুষ এগিয়ে। সাক্ষরতার হার ৮১ দশমিক ০৬ শতাংশ, এর মধ্যে নারী ৭৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং পুরুষ ৮২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। জেলায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার প্রায় ৩০ দশমিক ৩৮ শতাংশ তরুণ-তরুণী প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা ও টেনিং কার্যক্ষমের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, পুরুষের সংখ্যা ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ।

কৃষি নির্ভরতা কমেছে, বেড়েছে শিল্পখাত পেশা

এ দশ বছরে জেলায় কমছে কৃষিনির্ভর পেশার পরিমাণ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিল্পখাত, শিল্পের সঙ্গে জড়িত ও সেবাখাতের পেশার হার।  জেলায় কৃষিক্ষেত্রে কাজ করা জনসংখ্যার পরিমাণ ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর বিপরীতে শিল্পখাতে ২৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং সেবাখাতে ৫৩ দশমিক ৮০ শতাংশ জড়িত।

প্রযুক্তির ব্যবহারে পুরুষ এগিয়ে

মোবাইল, ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবহারে নারীদের চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে আছে। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মোট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৭ দশমিক ০৭ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। পুরুষ ৮৫ দমমিক ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৫০ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো যে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছে তা চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নের প্রয়োজনে আছে। আশা করছি আগামিতে এসব উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব দেব দুলাল ভট্টাচার্য্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চন্দন কুমার পোদ্দার। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।