নিজস্ব প্রতিবেদক :
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জনগণকে যতদূর সম্ভব ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, অদৃশ্য একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করছি। আমার সুরক্ষা আমার কাছে। এটি যদি অনুধাবন করতে নাপারি আরেকজনতো জোর করে সুরক্ষা দেওয়া কঠিন। লকডাউন শিথিল করা মানে এই নয়, অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি করবো, অকারণে বের হবো, জনসমাগম করবো।
তিনি বলেন, অহেতুক ঘর থেকে বের হয়ে ঘোরাঘুরি করায় করোনা রোগীর সংখ্যা ইতিমধ্যে বেড়েছে। সবাইকে চিন্তা করতে হবে আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে জীবন জীবিকা দুটিই রক্ষা করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যেখানে এখনো ডজন ডজন মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছে সেখানেও অনেক জায়গায় লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। আমার সুরক্ষা যদি আমি না নিই তাহলে কাউকেতো জোর করে নেওয়ানো সম্ভব নয়। তবে অহেতুক ঘোরাঘুরি করা কোনভাবেই সমীচিন নয়।
বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে করোনা ভাইরাস (কোভিট-১৯) মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত সমন্বয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। বক্তব্য রাখেন ভুমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, ওয়াসিকা আয়েশা খানম এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মাহাবুবুর রহমান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বিসহ সিভিল প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিসহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা সমন্বয় সভায় অংশ নেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মুক্ত থাকেনি। পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলো করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যুদস্ত অবস্থা। অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত সেখানে শনাক্তরোগীর ৬ ভাগ মৃত্যুবরণ করছে, যুক্তরাজ্য যেখানে মেডিকেল সায়েন্স অনেক উন্নত সেখানেও শনাক্ত রোগীর ১৪ পার্সেন্ট, বেলজিয়ামে শনাক্ত রোগীর ১৫ পার্সেন্ট, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৩.২ পার্সেন্ট, পাকিস্তানে ২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর হার এখন ১পয়েন্ট ৪ ভাগ। সরকার শুরু থেকে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণে মৃত্যুর হার এখনো অনেক দেশের তুলনায় কম। এটি একটি বৈশ্বিক দূর্যোগ, সবার সহযোগীতা নিয়েই আমরা এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে চাই।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক সমস্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, যেকারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেক দেশের মত ভেঙ্গে পড়েনি। অনেক দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল। পাকিস্তানেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়েছিল। সেখোনে ডাক্তারদেরকে এরেস্ট করতে হয়েছে হাসপাতাল চালু রাখার জন্য। বাংলাদেশে সেরকম পরিস্থিতি হয়নি। বাংলাদেশের অনেক ডাক্তার সাহসিকতার সাথে এই পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনেকে অহেতুক সরকারের সমালোচনা করেন। আমাদের ব্যবস্থাপনা যদি ভাল নাহতো বা খারাপ হতো তাহলে এই শনাক্ত রোগীর মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশেও বেশি হতো। বরং আমাদের দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় এখন কম।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কোভিট-১৯ ব্যবস্থাপনায় অনেকে ধন্যবাদ না দিলেও বিশ্ব সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব স্বীকৃত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, ওর্য়াল্ড ইকোনমিক ফোরামসহ অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার প্রশংসা করেছেন। আমরা তাঁর নির্দেশেই কাজ করছি, আজকের বৈঠক সম্পর্কেও তিনি অবহিত আছেন।
তিনি বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবন রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন, একই সাথে বাংলাদেশের মতো ১৭কোটি মানুষের একটি উন্নয়নশীল দেশে দু’মাসের বেশি সময় সারাদেশের সমস্ত কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। দুমাস ধরে খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে। এখনো একজন মানুষও অনাহারে মৃত্যুবরণ করেনি। দেশে প্রায় সাতকোটি মানুষ নানাভাবে সরকারের সহায়তার আওতায় এসেছে। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ পাবার অধিকার রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, করোনা ভাইরাসের মধ্যে সাংবাদিকরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করছে। ইতিমধ্যে দেড়শতাধিক সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তিনজনের বেশি সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছে।
চট্টগ্রামের ৪ হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, সরকার ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়েল হাসপাতাল, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, এবং ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালকে কোভিট হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। প্রয়োজন হলে আরো হাসপাতাল অধিগ্রহণ করবে সরকার।
এসব হাসপাতালের বাইরে সভায় চট্টগ্রামে আইসোলেশন ইউনিট স্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এজন্য নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেসরোডে অবস্থিত সিটি কমিউনিটি হলে তিন’শ বেডের একটি আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। এরপরও যদি আরো আইসোলেশন ইউনিটের প্রয়োজন হয় তাহলে চট্টগ্রামের শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্বলিত কমিউনিটি হলগুলোকে প্রয়োজনে আইসোলেশন ইউনিটে রূপান্তর করা হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরে করোনা ভাইরাসের স্যাম্পল কালেকশনের জন্য দ্রুতসময়ের মধ্যে আরো ১১টি বুথ স্থাপন করা হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম পৌনে এককোটি মানুষের শহর। চট্টগ্রামের আশপাশের জেলা ও উপজেলা মিলে প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে চট্টগ্রামে যেসকল মেডিকেল ফ্যাসিলিটিজ আছে সেগুলোতেই স্বাস্থ্যসেবা দিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই চট্টগ্রামে দু’হাজারের বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এবং সংক্রমণও দ্রুত বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্ধারণে আজকের সমন্বয় সভা।
তিনি বলেন, আজকের সমন্বয় সভায় বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি, প্রশাসনের প্রতিনিধি ও পুলিশের প্রতিনিধিসহ ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটি এসব হাসপাতালগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করার জন্য কি কি প্রয়োজন সেগুলো নির্ধারণ করে ঠিক করবেন। হাসপাতালগুলো আজ থেকেই সরকার অধিগ্রহণ করা শুরু করবে।
কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে আজকেই হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল অধিগ্রহণ করা হবে। আগামীকাল অথবা পরশুদিনের মধ্যেই বাকিসব হাসপাতাল অধিগ্রহণ করা হবে। রেলওয়ে হাসপাতাল সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত বলে রেলওয়ের প্রতিনিধি সভায় জানিয়েছেন।
সেখানে এখনই রোগী ভর্তি করানোর জন্য। এছাড়া সভায় শিপব্রেকার্স এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি জানিয়েছেন তাদের ১০০ বেডের হাসপাতালটিও করোনা রোগীদের চিকিৎসায় তারা দিতে পারবেন। এছাড়া নগরীর পার্কভিউ হাসপাতাল অলরেডি করোনা ইউনিট চালু করেছেন।