চট্টগ্রামের সাথে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ

smart

হেফাজতের তাণ্ডব
ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সোনারবাংলা
বিভিন্ন স্টেশনে আটকে রয়েছে যাত্রীরা
হরতালে স্বাভাবিক নগরী
সচল হয়েছে হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক <
হরতালে চট্টগ্রামের সাথে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের কর্মীদের তাণ্ডবে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনারবাংলা ট্রেনে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পর গতকাল সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো পথিমধ্যে বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো মানুষ। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে হেফাজতের ডাকা হরতালে সচল ছিল নগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক জীবনধারা।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকালের হরতালে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ট্রেন চলাচল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনারবাংলা ট্রেনটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লাঠি ও পাথর হাতে ট্রেনটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হেফাজতের কর্মীরা। তাদের আক্রমণে ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক আহত হয়ে ভৈরব রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া কয়েকজন যাত্রীও আহত হয়েছেন। পুরো ট্রেনের সবগুলো জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং ইঞ্জিনের ভাঙচুর চালিয়েছে হেফাজতের কর্মীরা। হামলার বিষয় জানতে কথা হয় সোনারবাংলা ট্রেনের চালক মোহাম্মদ হানিফের সাথে। তিনি বলেন, আমার ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থামার কথা নয়। আমি সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের আউটার স্লো করেছিলাম। আর তখনই দেখি শত শত লোক লাঠি নিয়ে ট্রেনে আক্রমণ শুরু করে। পরবর্তীতে তারা পাথর নিক্ষেপ করে। এতে ট্রেনের অনেক যাত্রী আহত হয়।
স্লো কেন করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে আসা একটি মালবাহী ট্রেনের চালক আমাকে সতর্ক করে জানান সামনে বিক্ষুব্ধ মানুষ রয়েছে। তখন আমি ঢাকা কন্ট্রোলে কথা বলি। কন্ট্রোল থেকে আমাকে ট্রেন নিয়ে সামনো এগুতে বলে। তাই স্লো করে এগুচ্ছিলাম। আর তখনই হাজারো মানুষ ট্রেনের উপর হামলে পড়ে। তারা ট্রেনের জানালা সব গ্লাস ভাঙচুর করে। ইঞ্জিনের গ্লাস ও নম্বর প্লেট ভেঙে ফেলে। তাদের হামলায় আমি ও আমার সহকারী আহত হই। এছাড়া কয়েকজন যাত্রীও আহত হয়েছে। আমরা ভৈরব বাজার রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমি কৌশলে ট্রেনটি পেছনের দিয়ে নিয়ে যাই। অন্যথায় পুরো ট্রেন তারা জ্বালিয়ে দিতো। বর্তমানে আমরা ট্রেনটি ভৈরব বাজার স্টেশনে অবস্থান করছি।
এদিকে চট্টগ্রামের সাথে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সব ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার কারণে কোনো ট্রেন ঢাকায় যেতে পারেনি। সব ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া সুবর্ন ট্রেন কোথায় রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রেনটি আখাউড়ায় রয়েছে। আখাউড়া থেকে তা আবার ডাউন হিসেবে চট্টগ্রামে ফিরে আসছে।
তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত ( রাত ৯টা) ঢাকার সাথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্লক থাকায় ঢাকার সাথে সিলেটের রেল যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে গতকাল বিকেলে হেফাজতের আমির আল্লামা বাবু নগরী হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হরতাল সফল হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। একইসাথে পুলিশের গুলিতে নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া যারা পুলিশের হাতে আটক রয়েছে তাদের মুক্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ইটের দেয়াল দিয়ে বন্ধ এবং চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক ব্লক করে দেয়ার বিষয়ে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, হরতাল শেষে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ইটগুলো খুলে ফেলেছে। হাটহাজারী- খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল সচল হয়েছে। শুক্রবার দুপুরের দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের মাঝখানে ইটের দেয়াল তুলে দেয় শিক্ষার্থীরা। এতে খাগড়াছড়ির সাথে চট্টগ্রামে যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম রাঙামাটি সড়কে রাউজানের ইছাপুর এলাকায় রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় হেফাজতের কর্মীরা। বিকেলের পর তা সচল করে দেয়া হয়।
গতকালের দিনভর হরতালে নগরীতে যান চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার গাড়িগুলো সকালের দিকে কিছু পরিমাণে ছেড়ে গেলেও দুপুরের পর থেকে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যায়। এছাড়া নগরীর সব অফিস আদালত ও ব্যাংক পাড়া ছিল সচল।
হেফাজতের ডাকা হরতালে রাজপথে ছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে যুবলীগের কর্মীরা অবস্থান নিয়েছে। আবারো কোথাও কোথাও মোটর সাইকেল শোভাযাত্রাও করেছে যুবলীগের কর্মীরা। তাই রাজপথে হরতালে পিকেটিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।