এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন দেশজুড়ে গোলাপ ফুলের গ্রামের খ্যাতি পেয়েছে দেড়যুগ আগে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’পাশ জুড়েই বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় ফুল। ৫-৬ বছর ধরে পাশের ইউনিয়ন হারবাংয়ের বিস্তীর্ণ জমিতেও হচ্ছে ফুল চাষ। সারাবছর গোলাপ চাষ হলেও মূলত শীতকালেই মৌসুম। এ সময় গ্লাডিওলাসসহ গোলাপ ফুল পরিপূর্ণ যৌবন লাভ করে।
দেশের মধ্যে সাভার, যশোর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় ফুল চাষ হলেও গত দেড়যুগ ধরে দক্ষিণ চকরিয়ায় উৎপাদিত ফুল বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও রাজধানীর চাহিদা পূরণেও অংশীদার হয়ে উঠেছে।
কাপড় ও প্লাস্টিকের তৈরি কৃত্রিম ফুলের কারণে আসল ফুলের বাজার চাহিদা হ্রাস পেলেও কমেনি কদর। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দুটি দিবসে ফুল বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। ভালবাসা দিবসে কয়েকগুণ বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা।
এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি দিবসে অন্তত ৫০ লাখ টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়ে চকরিয়ার ফুল চাষিরা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকেই চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুল সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে এখানকার চাষিরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়ক লাগোয়া বরইতলী ইউনিয়নের একের পর এক ফুলের বাগান। পর্যটন জেলা কক্সবাজারমুখি পর্যটকদেরও নজর কাড়ে এ বাগান। বরইতলী ছাড়াও সাহারবিল, দুটিসহ পুরো উপজেলায় শতাধিক ব্যক্তির ফুলের বাগান রয়েছে। অন্তত ১’শ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে করা হয়েছে এ ফুল চাষ।
মাঠে গেলে দেখা মিলে বেশ ক’জন নারী-পুরুষের। তাদের কেউ বাগান পরিচর্যা করছিলো। কেউ তুলছিলো ফুল। আবার কেউ বান্ডিল করে খামার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল।
চাষিদের ভাষ্যমতে, সূর্যের তাপ বাড়ার আগেই গ্লাডিওলাস তুলে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার আড়তে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ভোর থেকে সারাদিনেই তোলা হয় গোলাপ ফুল।
বরইতলী একতাবাজার এলাকার ফুল চাষি শহিদুল আলম দুই একর জমিতে গোলাপ ও এক একর জমিতে গ্লাডিওলাস এবং চাষি বোরহান উদ্দিন ৩৩ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ও ১ একর ৪০ শতক জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। দুজনের ফুল বাগানেই ১০-১৫ জন করে শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের সিংহভাগই নারী।
এই দুই চাষি বলেন, প্রতি কানি জমি ২০-২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বর্গা নিয়ে তারা চাষ করেছেন। এর মধ্যে কলম দেয়া গোলাপ একবার রোপন করলে ৪-৫ বছর ফুল পাওয়া যায়। গ্লাডিওলাস চাষ করে তিন মাস মেয়াদের মধ্যেই ফুল বিক্রি শেষ করতে হয়। তাদের মতে ৪০ শতক জমিতে ফুল চাষ করতে ১ লাখ টাকা খরচ হয়। চাহিদা ও ন্যায্য মূল্য পাওয়া গেলে ভাল মুনাফা হয়।
তারা বলেন, যশোর থেকে আমরা প্রথমে গ্লাডিওলাসের বীজ সংগ্রহ করেছিলাম। পরে নিজেদের চাষ থেকেই বীজ সংগ্রহ করি পরবর্তী মৌসুমের জন্য।
বাগান মালিকরা বলেন, একটি গ্লাডিওলাস উৎপাদনে খরচ হয় ৪-৫ টাকা আর বিক্রি হয় ৭ টাকা। গোলাপ উৎপাদনে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ পয়সা ফুল প্রতি খরচ হয়। বিক্রি হয় ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত। তবে, বাজার চাহিদা হ্রাস পেলে খরচের টাকাও উঠে না ফুল বিক্রি করে।
বরইতলী ফুল বাগান সমিতির আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে আট মাস বন্ধ ছিলো ফুল চাষ। ওই সময়টাতে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অনেকে ফুল চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে ফুল চাষ কমে গেছে। এখন মোটমুটি পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দিবসে চাহিদা বাড়ায় অধিক ফুল বিক্রি হয়। এসময় প্রতি চাষি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে মুনাফা অর্জন করে। শুধু মাত্র শতাধিক চাষি নয়, চকরিয়ার ফুল বাগানে শ্রমজীবী কাজ করে ৩ থেকে ৪ হাজার শ্রমিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক শ্রমিক অন্যের জমিতে কাজ করলেও এখন নিজেরাও জমি বর্গা নিয়ে বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এসএম নাসির হোসেন বলেন, চকরিয়ার সরকারি হিসেবে মোট ৮৩ হেক্টর বা ২০৫ একর জমিতে গোলাপ ও ৫২ হেক্টর বা ১২৮ একর জমিতে গ্লাডিওলাস চাষ হয়েছে। সরকারিভাবে ফুল চাষিদের সাহায্য করার কোন সুযোগ নেই। শুধুমাত্র ফুল চাষ নিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বরইতলীর ফুলবাগানকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছে।